হিলিতে হালিতে ডিমের দাম বেড়েছে ৮ টাকা
প্রশাসনের নানামুখী অভিযান ও প্রয়োজনে ভারত থেকে ডিম আমদানি করা হবে- বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর ডিমের দাম কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও আবারও বাড়তে শুরু করেছে ডিমের দাম। ৩ দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে প্রতি হালিতে ডিমের দাম বেড়েছে ৮ টাকা। ৩ দিন আগে প্রতি হালি ডিম ৩৬ টাকা করে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আবারও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষজন। হিলি বাজারে ডিম কিনতে আসা ভ্যানচালক এনামুল হক বলেন, সারা দিন ভ্যান চালিয়ে আমাদের যে আয় রোজগার তাতে মাছ-মাংস তো আর কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই সস্তার মধ্যে একটু ডিম কিনেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাই। কিন্তু যেভাবে ডিমের দাম বাড়ছে তাতে করে এটিও খাওয়া বাদ দিতে হবে আমাদের।
তিনি আরও বলেন, আগে যেখানে সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ হালি ডিম কিনতাম এখন দাম বাড়ার কারণে সেখানে এখন এক থেকে দুই হালি কিনছি। এটাও নির্ভর করছে আয়ের উপর। কিন্তু বর্তমানে আগের মতো তো আমাদের আয় নেই। আগে যেখানে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হতো এখন সেখানে ২০০-২৫০ টাকা আয় হয়। এতে ডিমসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ায় আমাদের সংসার চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে।
বাজারে ডিম কিনতে আসা খুশি বেগম বলেন, আমার স্বামী নেই। বস্তা সেলাই করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোভাবে দুই মেয়েকে নিয়ে চলি। কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে করে আমাদের মতো মানুষদের মরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমার দুই মেয়েই স্কুলে পড়ে। তাদের তো ভালোমন্দ কিছু খাওয়াতে পারি না। এ কারণে তাদের জন্য অন্তত এক বেলা ডিম রান্না করে দিতাম কিন্তু সেটিও এখন সম্ভব হচ্ছে না। আগে যে ডিম ৯ টাকা পিস কিনেছি সেই ডিম এখন কিনতে হচ্ছে ১২ টাকায়। এতে করে আমাদের চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তাই আমাদের মতো গরিব মানুষদের জন্য ডিমের দামটা যদি একটু কম হয় তাহলে ভালো হয়।
হিলি বাজারের ডিম বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমাদের এখানে ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, রংপুর এই অঞ্চল থেকে ডিম বাজারে আসে। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এ কারণে মোকাম থেকে ডিম নিয়ে আসতে ডিমের দাম বেশি পড়ছে। এ ছাড়া উপকরণের দাম বাড়ায় ফিডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। ফলে ডিমের উৎপাদন খরচ বাড়ায় ডিমের দাম বাড়ছে বলে মোকাম থেকে আমাদের জানিয়েছে। গরমের কারণে ডিম নষ্ট হয়ে যায়। তাই ব্যবসায়ীরা দ্রুত ডিম বাজারে ছেড়ে দেয়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে আবহাওয়া ঠান্ডা রয়েছে। ঠান্ডায় ডিম বেশ কিছুদিন রাখা যায়, নষ্ট হয় না। তাই অনেক ব্যবসায়ী তাদের গুদামে ডিম স্টক করে রেখে দেয়। ফলে বর্তমানে বাজারে ডিমের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেওয়ায় ডিমের দাম বাড়ছে। সরবরাহ বাড়লে আবারও ডিমের দাম কমে আসবে বলেও জানান তিনি।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, শুধু ডিম নয় নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে বাজারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাকে জরিমানা করা হবে।
এসজি