মানুষের সর্বনাশ করে কয়লাখনি হতে দেওয়া হবে না: আনু মুহাম্মদ
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট ফুলবাড়ীর সেই সাহস, ফুলবাড়ীর সেই শক্তি, সেই প্রেরণা, ফুলবাড়ীর সেই শহীদদের প্রেরণা এবং যারা লড়াই করেছেন। সেই প্রেরণা নিয়ে আজকের ২০২২ সালেও ঘোষণা করতে চাই, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে যারা কয়লা তুলতে এখনও চক্রান্ত করছেন; তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের সর্বনাশ করে কোনোভাবেই কয়লাখনি করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৬ সালে এশিয়া এনার্জি যদি ফুলবাড়ীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করত তবে দেশের উত্তরবঙ্গের পানি সম্পদ নষ্ট হতো। এই এলাকা তিন ফসলি জমির ভয়ংকর পরিণতির মধ্যে যেত। এলাকার মাটি, পানি নষ্টসহ মানুষকে ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো। লাখ লাখ মানুষ ঘর ছাড়া হতো, উদ্বাস্তু হতো। সেই ভয়ংকর অবস্থা থেকে ফুলবাড়ীর গণঅভ্যুত্থান শুধু ফুলবাড়ীকে নয়, বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে।’
শুক্রবার (২৬ আগষ্ট) দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ’ফুলবাড়ী কয়লাখনি বিরোধী ট্র্যাজেডি’ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সদস্য সচিব ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এশিয়া এনার্জি ফুলবাড়ীর কয়লা সম্পদ লুটপাট করতে আবারও নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে। খনি বিরোধী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য আন্দোলনকারি নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা করেছে। নেতা-কর্মীদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কারসহ তাদের সুবিধাভোগীদের গ্রেপ্তার এবং ৬ দফা ফুলবাড়ী সমঝোতা চুক্তির পূর্ণবাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী) সেই সময় বলেছিলেন ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। কিন্তু তারা বর্তমানে ক্ষমতায় থাকলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এশিয়া এনার্জির মতো জালিয়াতি, টাউট, বাটপার কোম্পানিকে দেশ থেকে অবিলম্বে বহিস্কার করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের জন্য যেটা কল্যাণকর নয়, সেটা যতই প্রচারণা করা হোক আমরা তা গ্রহণ করব না। আজকের বাংলাদেশের সরকার ঘাড় ঘুড়াল সেই লুটেরার দিকে। বিদ্যুৎ খাতে যে সংকট এমন সব চুক্তি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে এবং তাদেরকে বলা হয়েছে তাদের বিদ্যুৎ লাগবে না। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে তাদের হাজার হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। গত ১১ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা এ রকম টাউটবাটপারকে দেওয়া হয়েছে।’
দিবসটি উপলক্ষে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, ফুলবাড়ী পৌর মেয়র ও আমরা ফুলবাড়ী বাসীসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আজ সকালে নিহতদের স্মরণে পৌরশহরে শোক, র্যালি প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এরপরে সকাল ১১টায় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ফুলবাড়ী ছোট যমুনা ব্রিজ সংলগ্ন শহীদ বেদি চত্বরে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সভাপতিত্বের বক্তব্যে সংগঠনটির উপজেলা শাখা আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘ফুলবাড়ীতে আগামী অক্টোবরের ১৫ তারিখে দেশব্যাপী জ্বালানি বিষয়ক সেমিনার হবে। নভেম্বরের ১৫ তারিখে প্রধানমন্ত্রী বরাবর জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হবে। নভেম্বরের ১৫ তারিখে যে ঘোষণা দেওয়া হবে সেটি ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে দাবি না মানলে, আমরা রাজপথে আন্দোলনে নামব। তখন রাজপথের আন্দোলন থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
এ ছাড়াও সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলির সদস্য মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মোসাদ্দেক হোসেন লাবু, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য নাজার আহম্মেদ, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির জেলা সভাপতি মেহেরুল ইসলাম, উপজেলা শাখা তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব জয় প্রকাশ গুপ্ত, সদস্য হামিদুল হক, সদস্য মো. আব্দুল কাইয়ুম, জেলা শাখা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এস এম নূরুজ্জামান জামান, উপজেলা শাখা বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিষ্ট লীগের সম্পাদক সঞ্জিত প্রসাদ জিতু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিকদার প্রমুখ।
এ ছাড়াও এদিন দোকান কর্মচারি ইউনিয়ন, মটরশ্রমিক ইউনিয়ন, হোটেল কর্মচারি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করে।
এসআইএইচ