ফুলবাড়ীতে বেগুনের বাম্পার ফলন, দাম কমায় দুশ্চিন্তায় চাষিরা
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার চাষীরা সাধারণত রবি শস্যের উপর নির্ভরশীল। উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা গিয়ে দেখা গেছে, কোনও জমি আর পতিত নেই। বিস্তৃর্ণ কৃষকের মাঠে মাঠে দু-চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। যেন চারিদিকে বেগুনের সবুজ রঙে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ। আর নয়ন জুড়ানো দৃশ্য মেতে উঠেছে ফসলের মাঠে। চলতি খরিপ-১ মৌসুমে বেগুনের বাম্পার ফলন ও টানা ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও গত দুই দিন বেগুনের একটু দাম কমায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন চাষীরা। তারপরও কোনও কৃষক ঘরে বসে নেই। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কৃষকরা ক্ষেতের বেগুন বিক্রি করাসহ বেগুন ক্ষেত পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বেগুন চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। তাই গত বছরের চেয়ে চলতি খরিপ-১ মৌসুমে ব্যাপক হারে চাষীরা বেগুন চাষ করছেন। যেসব চাষির নিজস্ব জমি নেই তারাও অন্যের জমি লিজ নিয়ে বেগুন চাষ করে স্বচ্ছলভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।
অধিক লাভের আশায় প্রতি বছরই আগাম বেগুন চাষ করে লাভবান হচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। তারা বেগুন চাষের পাশপাশি সারা মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের সবজির আগাম চাষ করে বদলে দিয়েছে নিজের ভাগ্যের চাকা। এসব চাষ করে স্বালম্বী হয়েছেন এ অঞ্চলের শত শত কৃষক পরিবার। তবে চলতি বছর হঠাৎ করে জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ কীটনাশক ওষুধের দাম বাড়ায় এবারের বেগুন চাষিদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় ১ মাস থেকে চাষিরা ক্ষেতের বেগুন ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা মন বিক্রি করলেও গত দুই-তিন দিন ধরে বেগুনের দাম কমায় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করছেন স্থানীয়সহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারদের কাছে।
জেলার অন্য উপজেলার তুলনায় ফুলবাড়ী উপজেলায় বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে ব্যাপক পরিমাণে বেগুনসহ সব ধরনের সবজির চাষাবাদ হয়। তবে এই বছর খরার মাত্রা বেশি থাকায় বেগুন চাষের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও ব্যাপক চাষাবাদ হওয়ার কারণে বেগুনের দাম কম থাকায় একটু দুচিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
কুরুষাফেরুষা এলাকার বর্গা চাষি ঈশা মিয়া জানান, তিনি এবার দুই বিঘা জমি ১ বছরের জন্য ৩৮ হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে আগাম বেগুন চাষ করেছেন। গত ৮ থেকে ১০ দিন ধরে মানুষের জমি বর্গা নিয়ে বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করে আসছেন।
তিনি আরও জানান, প্রতি বছর বেগুন চাষ করে লাভ হয়েছে। এ বছর হঠাৎ করে জ্বালানি তেল, সার কীটনাশক ওষুধসহ দিন মজুরের মূল্য বাড়ায় খরচ দিগুন হয়েছে। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে বেগুনের মন ১৬০০ থেকে ১৭০০ বিক্রি করলেও গত তিন দিন থেকে বেগুনের দাম কমে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় মন বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দাম না বাড়লে বড় লোকসানের আশঙ্কা করছে এই চাষি।
একই এলাকার বেগন চাষি মনছার আলী ও পুলিল চন্দ্র রায় জানান, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে প্রায় টানা ১ মাস বেগুনের দাম ভালো ছিল। এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
তারা আরও জানান, প্রতি বিঘায় বেগুন রোপন করতে খরচ হয় কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বেগুন ক্ষেতে রোগ মুক্ত ও আবহাওয়া অনুকূলসহ বেগুনের ভালো দাম থাকলে ১ বিঘায় ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। সেই যাবতীয় খরচ মিটিয়ে বিঘা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। এ বছর কৃষিতে খরচের পরিমাণ বেশি হচ্ছে। সব জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ। সেই সামান্য রোগও দেখা যাচ্ছে। তবে বেগুনর মন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা থাকলে আমরা বেগুন চাষি লাভবান হতে পারব।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিমফুলমতি এলাকার বেগুন চাষি রফিকুল ইসলাম ও সহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রতি বছর বেগুনের চাষ করেছি। এ বছর তারা প্রত্যেকে দুই থেকে তিন বিঘা জমিতে বেগুনের চাষাবাদ করেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বেগুনের ফলন ভালো হয়েছে। তারা ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষেতের বেগুন বিক্রি শুরু করবেন বলে জানান।
একই এলাকার মন্টু বর্মন, রোস্তম আলী ও হাসেম আলী জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর বেগুনের বাম্পার ফলন দেখা দিয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বেগুন বিক্রি শুরু করতে পারব।
তারা আরও জানায়, আপাতত বেগুনের বাজার দর কম। আশা করছি বেগুনের দাম বাড়বে। যদি বেগুনের দাম না বাড়ে তাহলে লাভ তো দূরের কথা লোকসান গুনতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: নিলুফা ইয়াছমিন জানান, চাষিদের বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করা ও বিভিন্ন সহযোগীতা দেওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা বেগুন চাষে ঝুঁকছেন। এ অঞ্চলের মাটি বেগুন চাষের উপযোগী হওয়ায় চলতি খরিপ-১ মৌসুমে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে । অধিকাংশ কৃষক বেগুন বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এ বছর খরার মাত্রা বেশি থাকায় বেগুনের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। প্রায় এক মাস থেকে বেগুনের দাম ভালো ছিল। গত দুই থেকে তিন দিনে একটু দাম কমলেও চাষিদের লোকসান হবে না। বরং বেগুন চাষিরা অধিক লাভবান হবেন। এদিকে শীত মৌসুমের জন্য চাষিরা আগাম বেগুনের চারা রোপনসহ ১০ হেক্টর জমিতে আগাম বেগুনের চাষাবাদ করেছে।
এসআইএইচ