ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করায় চাকরি হারালেন তিন শিক্ষক

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করায় তিন শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (৪ আগষ্ট) তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গত রবিবার (৭ আগষ্ট) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন অব্যাহতি পাওয়া তিন শিক্ষক কাউসার হাবীব (সমাজ বিজ্ঞান) , রাজিউর রহমান (গনিত) ও হারুন অর রশিদ (জীববিজ্ঞান)।
জানা গেছে, আরএইচ মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক পঙ্কজ সিংহ (ইংরেজি) ও ফরিদ উজ্জামান (গনিত) একাধিক ছাত্রীর শরীরে হাত ও কুপ্রস্তাব দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিরক্ত করতেন। এক ছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও করেছেন বলে পঙ্কজ সিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রীদের অভিযোগ শুনে প্রতিষ্ঠানের ওই তিন শিক্ষক প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এমনকি ছাত্রীদের উত্যক্ত করার বিষয়টি কলেজ অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের একাধিকাবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো শিক্ষক কাউসার হাবীবকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন ফরিদ উজ্জামান। পরে কাউসার হাবীব ফরিদ উজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে গেলে কলেজ কৃর্তৃপক্ষ অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত না করে বরং ছাত্রীদের পক্ষে কথা বলায় ওই তিন শিক্ষককে অব্যাহতির নোটিশ দেওয়া হয়।
অব্যাহতি পাওয়া ওই তিন শিক্ষক জানান, ছাত্রীরা তাদের সঙ্গে হওয়া নোঙরামির ঘটনাগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করত। ছাত্রীদের অভিযোগগুলো প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতাম। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হতো না। উল্টো আমরাই নাকি বাড়াবাড়ি করছি তাই গত রবিবার আমাদের অব্যাহতি পত্র দেওয়া হয়। কেন আমাদের অব্যাহতি দেওয়া হলো ইউএনও মহোদয়কে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি আমরা।
ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, শিক্ষক ফরিদউজ্জামান ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন-সাতজনের মধ্যে কে আমার রুম পার্টনার হবা? ফরিদউজ্জামান মাঝে মধ্যেই ক্লাসে সুযোগ পেলেই হাত ধরে বাজে বাজে কথা বলে আর কুপ্রস্তাব দেয়। কাউকে লজ্জায় বলতে পারতাম না আমরা। এজন্য স্কুলে নিয়মিত আসতাম না। কিন্তু মা-বাবার চাপে আসতে হতো। স্যারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করলে অনেকে বিশ্বাস নাও করতে পারেন। উল্টো আরও বিপদ হতে পারে। এ কারণে এত দিন কাউকে তা জানানো যায়নি। অবশেষে সইতে না পেয়ে কাউসার হাবীব, রাজিউর রহমান ও হারুন অর রশিদ স্যারকে বিষয়টি জানাই।
তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক ফরিদউজ্জামান ও পঙ্কজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব মিথ্যা বানোয়াট। আমাদের বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।
আরএইচ মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুর রহমান বলেন, ‘কোনো ছাত্রী শিক্ষক কর্তৃক শ্লীলতাহানি হয়েছে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই তিন শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান তনুজা আক্তার।
এ বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান তনুজা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্কুলের নাম নষ্ট করার জন্য কিছু লোক এমন নোঙরামি করছে। তবে ছাত্রীদের সাথে শিক্ষককের উত্যক্তের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে রাণীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার বলেন, ‘ অব্যবহিত পাওয়া তিন শিক্ষক আমার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এটা একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। কাকে রাখবে না রাখবে সেটা একান্তই কর্তৃপক্ষের বিষয়।
এসআইএইচ
