উৎকণ্ঠায় এমভি আব্দুল্লাহর প্রধান প্রকৌশলী সাইদুজ্জামানের পরিবার
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে আটক এমভি আব্দুল্লাহর প্রধান প্রকৌশলী নওগাঁর সাইদুজ্জামান। গত ১২ মার্চ মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশী পতাকাবাহী একটি জাহাজ এবং ২৩ নাবিক ও ক্রুসহ অপহরণ করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
‘আমাদের জাহাজে অ্যাটাক হইছে। জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের সবাইকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদেরকে মারধর করেনি। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত ভালো আছি, দোয়া কইরো।’
ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে সর্বশেষ স্ত্রী মান্না তাহরিন শতধা সঙ্গে মুঠোফোনে এসব কথা বলেন।
আজ বুধবার সকাল ৮টার দিকে একটি ভয়েস রেকর্ড বার্তা আসে মান্না তাহরিন শতধা মুঠোফোনে। সেই বার্তায় একজনের কণ্ঠ শোনা যায়। তিনি জানান, ‘স্যার ভালো আছেন। সেহরি করে স্যার এখন ঘুমাচ্ছেন। কোনো মেসেজ থাকলে এই নাম্বারে এসএমএস পাঠাবেন।’
স্বামীকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকায় মান্না তাহরিন শতধা বলেন, ‘জাহাজের কাজ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় গভীর সমুদ্রে গেলে ১৫-২০ দিন ধরে তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ থাকে না। তখন চিন্তা হতো। নেটওয়ার্কের মধ্যে আসলেই তাঁর সঙ্গে আবার যোগাযোগ হতো। কিন্তু এবারের বিষয়টি অনেক উদ্বেগের। তাঁরা জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। খবরে দেখতেছি, মুক্তিপণ না পেলে তাঁদেরকে নাকি একে একে মেরে ফেলবে। এ অবস্থায় আমি চরম উৎকণ্ঠায় সময় অতিবাহিত করছি। এক বছরের কন্যা সন্তান আর অসুস্থ শশুর শাশুড়ি নিয়ে সাহায্যের জন্য কোথাও যেতে পারছি না। সরকার ও জাহাজ কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আকুতি, যেভাবেই হোক আমার স্বামীকে জলদস্যুদের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।’
আজ বুধবার দুপুরে নওগাঁ শহরের আরজি নওগাঁ এলাকায় প্রকৌশলী সাইদুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী ছাড়াও তাঁর বাবা সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম ও মা কহিনুর বেগমের সঙ্গে কথা হয়।
নওগাঁর সাপাহার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আমার ছেলের নাম্বার থেকে ফোন আসে। ফোন করে জানায়, তাঁদের জাহাজে জলদস্যুরা অ্যাটাক করেছে। জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর গতকাল রাতে ও আজ সকালে অন্য নাম্বার থেকে ভয়েস এসএমএস পাঠিয়েছে। ভয়েস এসএমএসে জানিয়েছে, সে ভালো আছে। দস্যুরা কোনো মারধর করেনি। একটি ঘরে তাঁদের সবাইকে আটকে রাখা হয়েছে। জাহাজে খাবার পানির সংকট থাকায় তাঁদেরকে খুব কম পরিমাণে পানি খেতে দেওয়া হচ্ছে।’
আব্দুল কাইয়ুম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জাহাজ কোম্পানির গাফিলতির কারণেই জাহাজটিতে জলদস্যুতের আক্রমণ হইছে। কোটি কোটি টাকার মালামাল বহন করে অথচ সেই জাহাজে কোনো কোস্ট গার্ড নিয়োগ দেওয়া নেই। কোস্ট গার্ড থাকলে জলদুস্যরা এত সহজে আক্রমণ করতে পারতো না। এর আগেও ওই কোম্পানির জাহাজে জলদস্যুতের আক্রমণ হইছে।’
সাইদুজ্জামান ২০ বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশি বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানির জাহাজে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন জাহাজে কাজ করছে। এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজ এস আর শিপিং লিমিটেড কোম্পানির একটি জাহাজ।
উল্লেখ্য, মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন।