‘বাড়িতে খাবার নেই, তীব্র শীতে কাজ না করলে খাবার জুটবে না’
ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
নওগাঁয় জেঁকে বসেছে শীত। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে দিনমুজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। এতে কাজে যেতে না পারছেন না নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। অনেক দিনমজুর শীত উপেক্ষা করে বেরিয়েও কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় ব্রিজের মোড়, এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তীব্র শীত উপেক্ষা করেই ভোর থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষরা কাজ পাবার আশায় লিটন ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় এসে বসে আছেন। প্রায় সবার সঙ্গেই রয়েছে মাটি কাটা ঝুঁড়ি আর কোদাল। আর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কাজ পাবে কি পাবেনা এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতির দিয়ে মধ্যে সময় পার করছেন।
এ সময় কথা হয় দিনমজুর শ্রী নারায়ণের সঙ্গে। তিনি ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, ‘ঢান্ডার মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে,বাড়িতে কারো খাবার আছে কারো নেই,এই অবস্থায় চলি, কিন্তু কাজ না করলে খাবার জুটবে না, কাজে এসেও কাজ হচ্ছে না, কাজ না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যাই, এখন কি করে চলি?
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, নওগাঁতে বুধবার সকাল ৯টায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
জরুরি প্রয়োজনে তীব্র শীত উপেক্ষা করে সকাল আটটায় শহরের একটি স্কুলের পোশাক পরিয়ে সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন ইউনুস আলী ফাইম।
তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘পৌষ মাসে এত শীত আগে কখনো অনুভব করিনি। বাচ্চা তো সর্দি-কাশিতে ভুগছে। স্কুলে কড়াকড়ি থাকায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিয়ে যেতে হচ্ছে।’
নওগাঁ শহরে ইলেক্ট্রিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) চালিয়ে সংসারের খরচ মেটান সুমন (৪২)। তিনি শহরের সুলতানপুর এলাকায় থাকেন। তাঁর সঙ্গে আজ বুধবার কথা হয় শহরের পার-নওগাঁ ট্রাক টার্মিনাল এলাকায়। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডায় হাতের আঙ্গুলের রগ জড়ো হয়ে যাচ্ছে। হাত মনে হচ্ছে অবশ হয়ে যাচ্ছে। হ্যান্ডেল ঠিকমতো ধরে রাখা যায় না। গতকাল শীতের কারণে সারা দিন বের হইনি। আজ ভোরে শীতের মধ্যে বের হলেও তেমন ভাড়া পাইনি। সকাল ১০ টা পর্যন্ত মাত্র ৩০ টাকার ভাড়া মারছি।’ সুমন বলেন, শীতের কারণে লোকজন বের হচ্ছে না। তাই ভাড়া হচ্ছে না।
শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকায় সকাল ৯ টার দিকে কথা হয় সিএনজি চালক করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিন-চার দিন ধরেই সারা দিনই হিম বাতাস বইছে। শীতে একেবারে কাবু হয়ে যাচ্ছি। দুই দিন ধরে ব্যাপক ঠান্ডা পড়ছে। গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।’
এদিকে ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে ৭০৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে (১৯ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমম্যায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭১ জন।
নওগাঁ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আশিষ কুমার সরকার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, তীব্র শীতে শিশুরা ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট সমস্যায় বেশি ভুগছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের বুকের দুধ পান করাতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং বাসি ও ঠান্ডা খাবার খাওয়া যাবে না। শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
এদিকে শীতের কারণে রবি শস্যের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। কুয়াশা ও তীব্র শীতে বোরোর বীজতলা লালচে হয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া আরও কয়েক দিন এরকম থাকলে বীজতলা নষ্ট হয়ে বোরো আবাদ ব্যাহত হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘন কুয়াশা ও শীতের হাত থেকে বোরো বীজতলা রক্ষার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিতে মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এ সময় বীজতলার চারা ভালো রাখতে সন্ধ্যায় বীজতলায় সেচ দিতে হবে। সকালে সেই পানি বের করে দিতে হবে। সুযোগ থাকলে রাতে বীজতলায় পলিথিন দিয়ে ছাউনি দেওয়া যেতে পারে। সকালে ছাউনি তুলে নিতে হবে।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা হামিদুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস বয়ে যাওয়ায় গত রোববার থেকেই তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। আজ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি নওগাঁতে এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী আরও কিছু দিন তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে পারে। আগামী সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’