শুকটিগাছার অকেজো রাবার ড্যামের কাজ শুরু
প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষকদের ফসল ফলানোর জন্য নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শুকটিগাছা এলাকায় আত্রাই নদীর উপর নির্মাণ করা হয় রাবার ড্যাম। কিন্তু নির্মাণের তিন বছর চালু হয়। তবে সেটির বিভিন্ন জায়গায় ছিদ্র হয়ে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে ভাগান্তিতে পড়ে নদীর উপর নির্ভরশীল কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চলতি মাসের ৬ তারিখে প্রায় ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে সেটির মেরামতের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বর্তমান দুটি বেলুনের কাজ শেষ হয়েছ। আর বাকি একটির কাজ শেষ হতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে। এটির কাজ শেষ হলে কৃষক ও মৎস্যজীবীরা বেশ লাভবান হবেন।
জানা গেছে, এক সময় শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে নওগাঁর আত্রাই নদীর দুই কূলে চাষাবাদ করা যেত না। নদীর পানি উজান থেকে ভাটির দিকে দ্রুত নেমে যেত। ফলে বিকল্প হিসেবে গভীর নলকূপের উপর কৃষকদের নির্ভর করতে হতো। এমন অবস্থায় ওই এলাকার কৃষিকে এগিয়ে নিতে সরকারের প্রযুক্তিগত নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজের অংশ হিসেবে পানি ধরে রাখতে আত্রাই নদীর দুই কূলে শুকনো মৌসুমে সেচ সুবিধার জন্য স্থাপন করা হয় রাবার ড্যাম। আত্রাই উপজেলার শুকটিগাছা এলাকায় নদীর উপর রাবার ড্যামটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। এরপর বেশ কয়েকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হয় ২০১৭ সালে শেষ হয় কাজ। এরপর একই বছর রাবার ড্যামটি স্থানীয় একটি পরিচালনা কমিটিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে ড্যামটি।
রাবার ড্যামের পাশে আড়ানি গ্রামের কৃষক আকবর হোসেন বলেন, রাবার ড্যামটি নির্মাণের পর প্রথম তিন বছর সুবিধা তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে নানা স্থানে ছিদ্র হয়ে অকেজো হয় পড়ে। ফলে প্রকল্পটির সুবিধা পাওয়া যায়নি। গত কয়েকদিন ধরে অকেজো রাবার ড্যামটির মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে। এটি মেরামতের কাজ শেষ হলে কৃষকরা আবারও লাভবান হবেন।
স্থানীয় মৎস্যজীবী সঞ্জিত কুমার বলেন, জীবিকার জন্য আমরা নদীর উপর নির্ভরশীল। গত তিন বছর ধরে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কষ্টের মধ্যে পড়েছি। রাবার ড্যামটি চালু থাকলে অনেক মাছ পাওয়া যেত নদীতে। তাই রাবার ড্যামটি সংস্কার কাজ শেষ হলে কৃষক-মৎস্যজীবী সবার জন্যই সুবিধা হবে।
শুকটিগাছা রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় লিমিটেডের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, রাবার ড্যামটি নির্মাণের পর তিন বছর সুবিধা পাওয়া গেছে। ড্যামের মাধ্যমে আত্রাই, ছোট যমুনা ও তুলসীগঙ্গা নদীর দুই তীরের পাঁচ উপজেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সেচ সুবিধা পাওয়া গেছে। কিন্তু গত তিন বছর থেকে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছিলাম আমরা। চলতি মাসে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। আর এ মাসেই মেরামতের কাজ শেষ হলে আমরা কৃষক ও মৎস্যজীবী ব্যাপক উপকৃত হব।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. জোনায়েত আলম বলেন, বেশ কিছুদিন পূর্ব রাবার ছিদ্র হয়ে যাওয়ায় ড্যামটি ফুলানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। গত কয়েক দিন ধরে মেরামতের কাজ চলছে। আশাকরি দ্রুত কাজ শেষ হবে।
নওগাঁর স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডির) নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, গত বছর পানি না শুকানোয় কাজটি করা যায়নি। বর্তমান আত্রাই নদীর পানি শুকিয়ে থাকায় প্রায় ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। খুব শিগগিরই রাবার ড্যামটি সচল হবে। এতে করে সকলেই উপকৃত হবে। কৃষকরা রবি-শস্য ফলাতে আর কোনো সমস্যা হবে না।
এসএন