পেটের দায়ে শ্রমিক দিবসেও শ্রম দিচ্ছেন তারা
১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এই দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না দেশের অনেক শ্রমিকই। এ ছাড়া পরিবারের কথা ভেবে শ্রমিক দিবসেও শ্রম দিচ্ছেন তারা। মে দিবসে নওগাঁয় শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন কাজের মধ্য দিয়ে। তবে পাচ্ছেন না শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন।
সোমবার (১ মে) এই দিবসেও কিছু মানুষ কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। কারণ কাজ না করলে তাদের পরিবারকে কাটাতে হবে অনাহারে। যদিও এই দিনে সব সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। তবুও কারও কারও ভাগ্যে মেলে না ছুটি। আবার ছুটির দিনে কাজের জন্য জোটে না বাড়তি অর্থও। ৮ ঘণ্টা কাজের কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজ করতে হচ্ছে ৮ ঘণ্টার অধিক। দেওয়া হচ্ছে না ওভারটাইম বা অতিরিক্ত সময় কাজের জন্য টাকা।
জানা যায়, জেলায় অটো রাইস মিল, হাসকিং মিল, ইটভাটা, খাবার হোটেল, মুদির দোকান, গ্যারেজ, ওয়ার্কশপ, দিনমজুর, গৃহপরিচারিকা, গাড়ি চালক, হেলপার অধিকাংশ খাতে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কর্মরত। আবার সেই শ্রমিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়। ইচ্ছে না থাকলেও করতে হয় ওভারটাইম। এমন পরিস্থিতি এখন হরহামেশাই দেখা যায়। তবে নারী শ্রমিকরাই বেশি অবহেলিত হচ্ছে। শ্রমের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। নারীরা শ্রম দিচ্ছে হাসকি রাইস মিলে, রাস্তা সংস্কারে, মাটিকাটা, ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে। এদিকে এত কাজ করলেও শ্রমিকদের কাজের নেই নিরাপত্তা, নেই ভবিষ্যৎ। তাই আমাদের দেশের শ্রমিকদের অবস্থা অনেকটা শোচনীয়, নেই নিশ্চয়তা।
১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকেরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। অধিকার প্রতিষ্ঠার ওই আন্দোলন করতে গিয়ে সেদিন ১০ জন শ্রমিককে জীবন দিতে হয়। এরপর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে দিনটি ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এদিকে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মহান মে দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে মে দিবস। শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলেও জানেন না বেশির ভাগ শ্রমিকরা, আবার কেউ জানলেও অজানা হয়ে থাকেন। তারপরও শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরির দাবি এখনো উপেক্ষিত, এখনো তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাই মে দিবস পালনের উদ্দেশ্যই হোক শ্রমিকের অধিকার আদায় ও তাদের নিরাপত্তা।
সরেজমিনে সোমবার নওগাঁ শহরের বেলকোন গ্রুপ রাইসমিলে গিয়ে দেখা যায়, এক দিকের গেট বন্ধ। একটু পরে সেই গেট দিয়ে একটি ট্রাক বের হলো। আরেক গেটে গিয়ে পাওয়া গেল একজনকে। তিনি জানালেন, ছুটি নেই। আজকেও কাজ করতে হচ্ছে। তবে অফিসে আজকে কম লোক কাজ করছে। কতক্ষণ কাজ করতে হয় প্রশ্ন করলে তিনি জানান, প্রায় ১০ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়।
পাশেই অবস্থিত সোহাগ ফিলিং স্টেশনের রিপন ঘোষ বলেন, ছুটি দেয়নি। এ ছাড়া সবাই চলে গেলে গাড়িতে তেল দেবে কে? সংসারও তো চালাতে হবে।
বাসচালক যুবরাজ ও হেলপার ভোলা বলেন, মালিকরা গাড়ি চালাবে। তাই এসেছি গাড়ি চালাতে। মে দিবস উপলক্ষে বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলাম, সেটা আর হলো না। তা ছাড়া গাড়ি চালালে কিছু রোজগারও হবে।
হাসকি চাতাল মিলের নারী শ্রমিকসহ একাধিক দিনমজুর বলেন, একদিন কাজ না করলে খাবার জুটবে না। তাই কাজ করতে এসেছি। এ ছাড়া আমাদের ছুটি দেয়নি। তাই পেটের দায়ে কাজ করছি।
নওগাঁ জেলা সিএনজি-অটো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, আসলে ৮ ঘণ্টার ডিউটি, আমাদের শ্রমিকদের জন্য এই দিবস না। এই দিনটিতে শোক প্রকাশ করে বসে থাকবে এমন শ্রমিক আমাদের এখানে নেই। কারণ তাদের গাড়ি না চালালে সংসার চলবে কেমনে। তাই এই শ্রমিকদের জন্য আমাদের কিছু করার নেই। শুধু দিবস পালন করে তাদেরকে মনে করে দেওয়া হয় শ্রমিক দিবস সম্পর্কে।
মে দিবসে ছুটি না দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাতে পারে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে নওগাঁ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক আশিকুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, আমরা অভিযানে বের হয়েছি। শহরের সরিষা হাটির মোড় থেকে অভিযান শুরু করেছি। যেখানে এই ধরনের কিছু দেখব সেখানে অভিযান চালানো হবে।
এসজি