ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও চলছে আরডিএ মার্কেট
এ যেন ‘একের ভিতর সব’ থিউরির প্রতিফলন। এক ছাদের নিচেই ইলেকট্রনিক্স, মুদি, কাপড়, কসমেটিকস, কোকারিজসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান নিয়ে গড়ে উঠে রাজশাহীর আরডিএ মার্কেট। কিন্তু মার্কেটের নিরাপত্তায় বিরাজ করছে অব্যবস্থাপনা। এর ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এজন্য ভেঙে ফেলার পরামর্শও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির। কিন্তু আপত্তি ব্যবসায়ীদের। আর উদ্বিগ্নতার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে যেন অসহায় স্থানীয় প্রশাসনও। এর ফলে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে মার্কেটটি।
এই মার্কেটের ভেতরে ঠুকলে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো ভেন্টিলেশন। মার্কেটে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার পথও নেই। এমনকি তাদের নেই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে ভেঙে ফেলতে চান রাজশাহী সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, এমনকি মার্কেটটির নির্মাণকারী সংস্থা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (আরডিএ)। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মার্কেটটি ভেঙে ফেলার সুপারিশও করেছে। কিন্তু অনড় ব্যবসায়ীরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে সড়ক সম্প্রসারণের কারণে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করতেই তড়িঘড়ি করে মার্কেটটি তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে ১৩৭ জন ব্যবসায়ীকে পুনর্বাসন করেছিল আরডিএ। এজন্য এটি ‘আরডিএ মার্কেট’ নামেই পরিচিত। তবে সময়ের সঙ্গে মার্কেটের আশপাশে ও উপরে জোড়াতালি দিয়ে তিন তলা এই মার্কেটে এখন দোকানের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি।
এই মার্কেটটি রাজশাহীর নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষদের প্রথম পছন্দ। যেকোনো উৎসবের আগে মার্কেটের ভেতরে-বাইরে পা ফেলার জায়গা থাকে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাহেববাজারের প্রধান সড়কের পাশে এই মার্কেটের পরিবেশ খুবই ঘিঞ্জি। মার্কেটের পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণে সরু রাস্তা। এসব রাস্তা দখল করেও ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে এই তিন দিক দিয়েই ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ঢুকবে না। মার্কেটের ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিদ্যুতের তারের জঞ্জালও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। যা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই ব্যবসায়ীদের।
ফায়ার সার্ভিস ২০১৯ সালের এপ্রিলে এই মার্কেটকে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে তাদের পক্ষ থেকে মার্কেটের প্রবেশপথে একটি পোস্টারও সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাতারাতি গায়েব হয়ে যায় পোস্টারটি। পরে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকে আরডিএ মার্কেট ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে এই মার্কেট ভেঙে নতুন করে নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আরডিএকে আলোচনা করতে বলা হয়। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার কারণে এই প্রক্রিয়া এগোয়নি।
এদিকে আরডিএ’র পুনর্বাসিত সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী জানান, এই মার্কেটে তেমন ঝুঁকি নেই। পরিবেশও ঘিঞ্জি না। তবে মার্কেটের আশপাশ দিয়ে মাকড়সার জালের মতো বিদ্যুতের তার টানার কারণে অগ্নিকাণ্ডের একটু ঝুঁকি আছে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী সদর দপ্তরের উপ-পরিচালক ওহিদুল ইসলাম জানান, এই মার্কেটের পরিবেশ এতটাই ঘিঞ্জি যে আগুন লাগলে ধোয়া বের হওয়ার মতো জায়গা নেই। একেবারে অপরিকল্পিতভাবে মার্কেটটা করা হয়েছে। ভবন করার আগে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন লাগে। কিন্তু এই মার্কেটের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। দুর্ঘটনা ঝুঁকি এড়াতে কোনো ব্যবস্থায় গ্রহণ করা হয়নি। এ কারণে অনেক আগেই মার্কেটটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর ইসলাম জানান, মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ। ভেতরে খাচার মতো পরিবেশ। আগুন লাগলে ব্যবসায়ীদের মালামাল যেমন পুড়বে তেমনি অনেক মানুষের প্রাণহানিরও ঝুঁকি আছে। তাই এটি ভেঙে ফেলার ব্যাপারে তারাও একমত।
তিনি জানান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মার্কেটটি ভেঙে ফেলার সুপারিশ করলে আরডিএ চেয়ারম্যান সিটি মেয়রের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনও এটি ভেঙে ফেলার পক্ষে মত দেন। কিন্তু পরে আরডিএ এগোতে পারেনি।
এ ব্যাপারে আরডিএয়ের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা রাহেনুল ইসলাম রনি জানান, এ বিষয়ে কাজ চলছে। মার্কেটটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের পরিকল্পনা আছে।
এসআইএইচ