বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে দর্শনার্থীদের ভিড়
বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের দরজার শুরুতে লেখা আছে, 'মোদের গরব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা' ও 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই'। দূর থেকেই আগ্রহের জন্ম হয় কী আছে? ভেতরে দেখতেই হয়! জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নানা দিক, ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিবনগর সরকার, মুক্তিযুদ্ধ ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়ের নানা ইতিহাস নিয়ে সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু রেল জাদুঘর। ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বগিকে সুসজ্জিত করে এ জাদুঘরের রূপ দেওয়া হয়েছে। এ জাদুঘর বর্তমানে জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশনে দুই দিনের জন্য অবস্থান করছে।
জানা যায়, জাদুঘরটিতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, জীবনকাল আর সংগ্রামী ইতিহাস সংবলিত ভিডিও প্রদর্শন করা হচ্ছে, অডিও সিস্টেমে সম্প্রচার করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ির ছবি, ব্যবহৃত চশমা, দলের প্রতীক নৌকা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় তামাক পাইপ ও মুজিব কোট। এ ছাড়া মুজিব শতবর্ষের লোগো, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের রেপ্লিকাও রয়েছে।
এ জাদুঘরে ১৯২০-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। গত সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে উত্তরা ট্রেনের সঙ্গে বিরামপুর থেকে জয়পুরহাট স্টেশনে এসেছে এই ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর। রেল জাদুঘরটি প্রদর্শনের জন্য স্টেশনের তিন নম্বর লাইনে রাখা হয়েছে। এ জেলার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে জাদুঘরটি। এটি দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
দর্শনার্থী জয়পুরহাট সরকারি রামদেও বাজলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল তাহমিদ রেজা বলেন, গতকাল রাতে প্রাইভেট শেষ করে আসার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু রাত ৮টার পরে এসে বন্ধ পেয়েছি। তাই আজকে স্কুল থেকে বন্ধুরাসহ এসেছি। ঘুরে ঘুরে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস জানতে পারছি।
আরেক দর্শনার্থী জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া বলেন, এখানে আসার পর ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছি। শিক্ষার্থী হিসেবে আমি উপকৃত হয়েছি। আমাদের জেলায় কোনো জাদুঘর নেই। ফলে টাকা খরচ করে যেতে পারি না। তবে আমাদের জেলায় যদি স্থায়ীভাবে জাদুঘর স্থাপন করা হয় তাহলে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাব।
জয়পুরহাট কালেক্টর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যতি চক্রবর্তী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এখানে এসে খুব ভালোভাবে জানতে পারলাম। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।
শহরের বৈরাগী মোড়ের সেলুন শ্রমিক সুধারাম বাবু হিটলার বলেন, এই বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। এখানে অনেক কিছু জানা ও শেখার আছে। ধন্যবাদ সরকারকে এমন সুন্দর আয়োজন করার জন্য।
আমদই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাব্বি ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরে যে প্রদর্শনীগুলো রয়েছে তা থেকে অনেক জ্ঞান অর্জন করার বিষয় আছে। জাতির পিতার বাল্যকাল থেকে শুরু করে যৌবনকাল পর্যন্ত সংগ্রামী ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। যা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত ভালো কাজ।
রেল জাদুঘরের দায়িত্বে থাকা আমজাদ হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গোপালগঞ্জ স্টেশন থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রা করে বর্তমানে জয়পুরহাট স্টেশনে দুই দিন রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে। আজ রাত ৮টার পরে সান্তাহারের উদ্দেশে রওনা দিব।
এসজি