রোজার আগেই জয়পুরহাটে নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী
আসন্ন রমজান শুরুর আগেই জয়পুরহাটে নিত্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগে গেছে। চাল, ডাল, তেল, মাছ, গরুর মাংস, সবজিসহ প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এর ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা বাধ্য হয়েই গরুর মাংসের বদলে একটু কম দরে খাসির মাথা, মুরগির বদলে বয়লারের খুচরো মাংস, ছাগল-ভেড়ার পা, মুরগির হাড়-গলা-গিলা-কলিজির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। সবজির মৌসুমে সংসারের চাহিদা অনুযায়ী তরকারি ক্রয়ের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছেন অনেক ভোক্তা। অথচ আমদানিকারক, মিলার, আড়তদার, মজুতদার, ফড়িয়া মধ্যস্বত্ত্বভোগী সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিটি খাদ্য পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় বিপর্যস্ত নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন। অথচ সরকারের দায়িত্বশীলদের দাবি, বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পণ্য মূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
জয়পুরহাট শহরের পূর্ব বাজার, বউ বাজার, নতুনহাট ও মাছুয়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কিছু দোকানে মূল্য তালিকা থাকলেও সব পণ্যের দাম মূল্য তালিকায় লেখা নাই। কেউ কেউ মূল্য তালিকা খুলে রেখেছেন। এ ছাড়াও মূল্য তালিকায় পণ্যের দামের ব্যবধান রয়েছে। ফলে পর্যাপ্ত খাদ্য শস্য উৎপাদন হওয়ার পরও সিণ্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম বেড়েই চলছে।
আজকের বাজার মূল্য অনুযায়ী,প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৪০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, সীম ২০ টাকা, ফুলকপি ২০ টাকা, খিরা শশা ২০ টাকা, শশা ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, বড় মাপের মিষ্টি লাউ ১৫০ টাকা, রঙিন বাঁধাকপি প্রতিটা ৫০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটা ২৫ টাকা, ব্রকলি প্রতিটা ৫০টাকা, করলা ১৬০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি ৩০ টাকা, লাউ প্রতিটা ৬০-৮০ টাকা। টমেটোর পাইকারি দাম প্রতি কেজি ২০ টাকা, তবে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। আলুর পাইকারি দাম প্রতি কেজি ১৭ টাকা,তবে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ২৩০, সোনালী ৩০০ টাকা, লেয়ার ৩১০, দেশি মুরগী ৫০০ টাকা এবং গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও কেজি প্রতি খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা , বোতল সয়াবিন ১৮৫ টাকা, সরিষার তেল ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়াও চিনি ১১০ টাকা, আটা ৫৫ টাকা, মশুর ডাল ১৩০ টাকা ও ছোলা বুট ৮৫ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গুড়া মশলা ও গরম মশলার দামও যে যেভাবে পারছে ক্রেতাদের কাছে ইচ্ছা অনুযায়ী বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
মাছুয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা এনামুল হক বলেন, 'পণ্যের মূল্য তালিকা আছে কিন্তু সবাই নামিয়ে রাখে এ জন্য আমিও নামিয়ে রাখছি। মূল্য তালিকায় লেখা তো দূরের কথা অনেক দোকানে তালিকাই নাই। আমরা নির্দেশ মানলেও অনেক ব্যবসায়ীরা তা মানে না। যারা মূল্য তালিকার নির্দেশ মানেননি তাদের বিষয়টি কেউ দেখতেও আসেন না। আমরা পাইকারদের কাছ থেকে কিনে এনে খুচরা বিক্রি করি। আমাদের পণ্যের দাম পাইকারি ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করে দেয়। আমরা বেশি দামে কোনো পণ্য বিক্রি করি না।'
জয়পুরহাট সদরের বৈরাগী মোড় থেকে আসা ক্রেতা রাব্বি ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগে বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এত ছিল না। এখন প্রতিটা দিন অতিবাহিত হচ্ছে আর পণ্যের দাম বেড়ে চলছে। বেশি দামের সবজি কেনার আগে সংসারের বাকী খরচের কথা মাথায় রাখতে হয়। বর্তমানে প্রতিটি পণ্যের মূল্য বেড়েছে। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাজার নিয়মিত মনিটরিং করলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকত। সামনে রোজা আসছে তখন পণ্যের মূল্য আরও বেড়ে যাবে। রোজায় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, এটা স্বাভাবিক। প্রত্যকবার রোজায় সবকিছু বেশি দামে কিনতে হয়।
কাঁচারি বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা সামিউল বাবু বলেন, মধ্যবিত্তদের জন্য কাঁচা বাজারসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যটা একটু বেশিই। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি রাখে। বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগে ক্রেতাদের পকেট কাটছে নিয়মিত।
কাঁচারি বাজারে বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা রিকশাচালক স্বপন শেখ জানান, ‘প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার করি। আবার হঠাৎ কোনো দিন শরীর অসুস্থ হলে রিকশা নিয়ে বের হতে পারি না। মাত্র কয়েক শত টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে চাল, তেল, আলু ও হালকা কিছু সবজির বাজার করলেই টাকা শেষ হয়ে যায়। গরুর মাংস তো দূরের কথা ব্রয়লার মুরগী কিনতে পারি না। এখনও রমজান আসেনি আমি সংসার নিয়ে চলব কি ভাবে?’
এ বিষয়ে জেলা কৃষিবিদ ওবায়দুল্লাহ মুসা বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে ও বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এক মাস পর মুসলমানদের পবিত্র রমজান শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, রমজান উপলক্ষে এখন থেকেই বাজার মনিটরিং করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সিণ্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এ ব্যাপারে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক ইফতেখার আলম বলেন, সরকারি মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি বিক্রির নিয়ম নেই। প্রতি মাসে তিন দিন বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ভোক্তাদের কাছে যে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
এসআইএইচ