ভালোবাসা দিবসে জয়পুরহাটে ফুল বিক্রির হিড়িক
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথায় ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত। শান-বাঁধানো ফুটপাতে, পাথরে পা ডুবিয়ে এ কাঠখোট্টা গাছ, কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে হাসছে। ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। শীতের রিক্ততা ভুলিয়ে আবহমান বাংলার প্রকৃতিতে ফাগুনের ছোঁয়া, আগুনরাঙা বসন্তের সুর। গাছে গাছে ফুটবে রক্ত শিমুল-পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম। ফুল ফুটবার পুলকিত এ দিনে বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক। তেমনি উত্তরের জেলা জয়পুরহাটে বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ছোঁয়ায় ফুলের দোকানে চলছে জমজমাট ব্যবসা।
জয়পুরহাট শহর ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন রকমের ফুল দিয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের মালা গাঁথা, ফ্লাওয়ার রিং তৈরি ও কাগজ মোড়ানোর কাজ। আর বসন্তে ভালোবাসার মানুষকে ফুলদিয়ে হাসি ফোটাতে বাজারগুলোতে ফুলের দোকানে কেনাবেচার হিড়িক। বিশ্ব ভালোাবাসা দিবস। উৎসবের রং ধরেছে ফুল ব্যবসায়ীদের মনে। তাই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের মহোৎসবে শহরের প্রধান সড়কের দুপাশে বাটারমোড়ে ফুলের বাজার এখন চাঙ্গা।
বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস কেনাবেচা আর আসন্ন একুশে ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে ভালো কেনাবেচা করার আশায় উপহার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফুলের দোকানে লাল গোলাপ, জুঁই, চামেলি, জারবেরা, রজনীগন্ধা, গাঁদাসহ নানা রং ও বর্ণের ফুলে সেজেছে বর্ণিল সাজে।
প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৫০- ৭০ টাকা, অন্য রঙের গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ১৫০-২০ টাকা, মল্লিকা ৩০ টাকা, ক্যালেনডুলা ১৫০-৩০০ টাকা, জিপসি প্রতি থোঁকা ৪০-৫০ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ৫০ টাকা, গাঁদা প্রতি পিস এক টাকার স্থলে ২ টাকা, ফুলের তোড়া সর্বনিম্ন সাড়ে চারশ থেকে ছয়শ টাকা, জারবেরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত যত গভীর হবে ততই ফুলের দাম বাড়তে থাকবে। এর মধ্যে তরুণদের পছন্দের শীর্ষে লাল গোলাপ ও জারবেরা রয়েছে বলে জানান।
ফুল ক্রেতা সফিকুল ইসলাম বলেন, আমি একটি বেসরকারি সেবামূলক সংস্থায় চাকরি করি। আমাদের অফিসে বসন্ত বরণ উৎসবে ফুল কিনতে এসেছি। প্রতিটি ফুলের মূল্য ৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। অফিসের জন্য ২০ টি ফুল কিনলাম। প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে। ফলে বসন্তকে তো বরণ করে নিতেই হবে।
জয়পুরহাট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রুমন হোসেন বলেন, 'আমার বড় ভাইয়ের বিবাহ। তাই শহরে ফুল কিনতে এসেছি। ভালোবাসা দিবসের জন্য ফুলের গায়ে আগুন লেগেছে। দুই দিন আগের ১০ টাকার গোলাপ এখন ৫০ টাকায় নিতে হচ্ছে। একটা দিনের কারণে ফুলের দাম বৃদ্ধি কেন'?
তবে উৎসবে দাম নিয়ে মাথা না ঘামালেন না শরের সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম বলেন, ফুলের দাম যতই হোক। ফুল কিনতেই হবে কারণ ভালোবাসা দিবসে গার্ল ফ্রেন্ডকে ফুল না দিলে রাগ করবে। তাই ফুল কিনতে এসেছি। ৫ টা ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছি তার সাথে দেখা করব।
শাইন ক্যাডেট স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী সারিতা সানম মেনাল। তার বাবাকে সঙ্গে এসেছেন ফুল কিনতে। তিনি বলেন, মাথায় ক্রাউন পরে খুব ভালোই লাগছে। আজ আব্বুর সাথে বসন্ত বরণ উৎসবে ঘুরতে যাব। উপহার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট দোকানের ফুল বিক্রেতা আবু তালেব মন্ডল জাকারিয়া বলেন, পহেলা বসন্ত ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যবসা ভালোই চলে। গত বছরের চেয়ে এবারে ভালোই বিক্রি বিক্রি হচ্ছে।
তবে গত বছরের চেয়ে এবার ফুলের দাম বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা। তাই বাড়তি দামে ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটলেও বছরের বিশেষ এই দিনে কিছুটা নারাজ হচ্ছেন ক্রেতারা। প্রতিটি ফুল দোকানের সামনেই ক্রেতাদের নজরকাড়া ভিড়। স্কুল, কলেজের তরুণ-তরুণীরা দরদাম করে নিজ নিজ পছন্দের ফুলটি বেছে নিতে ব্যস্ত রয়েছে তা প্রিয়জনকে দেওয়ার জন্য।
এএজেড