নির্বাচন নিয়ে সরকারের কারসাজি শুরু: হেলাল
আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের কারসাজি শুরু হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল বলেন, বিক্ষুব্ধ নেতাদেরকে যেনতেন মার্কা ধরিয়ে নিজ দলের প্রার্থীদের সরিয়ে দিয়ে প্রহসনের সংসদ গঠন করবে তারা। বিএনপি এ ধরনের কোন নির্বাচনকে মানবে না। জনগনও চায় তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে। এজন্য আগামীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হবে না দাবি করে হেলাল বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ও জনগনের অধিকার ফিরে না আসা পর্যন্ত বিএনপি রাজপথের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করে তুলবে।
বৃহস্পতিবার খুলনায় বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আজিজুল বারী হেলাল এসব কথা বলেন। দুপুরে নগরীর কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি খুলনায় অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সমাবেশ সম্পর্কে মিডিয়া কর্মীদের অবহিত করা হয়।
প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা। তিনি বিভাগীয় সমাবেশের প্রস্ততির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। একই সাথে অবৈধ সরকারের বশংবদ পুলিশ বাহিনীর নিন্দনীয় ভূমিকা সম্পর্কে অবগত করেন। জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে পুলিশ নগরীর হাজী মহসিন রোড থেকে ৩১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আসলামকে গ্রেপ্তার করেছে। নাশকতার যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, সে ঘটনার সময় অন্য একটি মামলায় তিনি কারাগারে ছিলেন।
অপরদিকে ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সোহাগের একমাত্র ছেলে বিশাল মঙ্গলবার মারা যায়। সোহাগ পুলিশের দায়ের করা গায়েবী মামলায় কারাবন্দি রয়েছে। বুধবার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে সোহাগ ছেলের জানাজা ও দাফনে অংশ শেষে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে তাকে পুনরায় জেলে নিয়েছে পুলিশ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আজিজুল বারী হেলাল জানান, রাজপথের আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত জুলাই মাস থেকেই ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। ২২ অক্টোবর খুলনায় গণ-সমাবেশে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি ঘটায় দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এই পর্যন্ত চলমান যুগপৎ আন্দোলনের চার দফা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ঢাকায় ৩০ ডিসেম্বর এবং ঢাকার বাইরে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল হয়। দ্বিতীয় কর্মসূচি ছিল ঢাকাসহ সারা দেশে বিভাগীয় শহরে ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান।
গত ১৬ জানুয়ারি বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হয় তৃতীয় দফার কর্মসূচি। চতুর্থ কর্মসূচি হিসেবে ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করবে বিএনপি। ৫ম দফায় আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের বিভাগীয় সদরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং নিত্যপণ্যের দাম কমানোসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হবে খুলনা বিভাগীয় সমাবেশ। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এছাড়া কেন্দ্রীয় একাধিক নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।
অতীতের ধারাবাহিকতায় খুলনার কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করতে চলছে সার্বিক প্রস্ততি ও বিশাল কর্মযজ্ঞ। আপনারা জানেন, এই সরকারের পেটোয়া পুলিশের দায়ের করা গায়েবী মামলায় রাজপথের আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পীসহ ৬৬জন নেতাকর্মীকে একদিনে জেলে পাঠানো হয়েছে। এর বাইরেও আরও অনেক কর্মী এই মুহুর্তে কারাগারে আছেন। তাদের অনুপস্থিতি আমাদেরকে ক্ষুব্ধ ও বেদনাহত করার পাশাপাশি সার্বিক প্রস্ততিতেও বিরুপ প্রভাব রাখছে।
প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে আমরা কর্মসূচিকে সফল করতে দিনরাত কাজ করে চলেছি। জাতীয় নির্বাহী কমিটির এক ঝাক নেতা খুলনা মহানগর সহ বিভাগের জেলায় জেলায় সভা সমাবেশ লিফলেট বিতরণ করে জনগনকে সংগঠিত করছেন। খুলনাতে একটি বিভাগীয় প্রস্ততি সভা সহ বেশ কয়েকটি সভা হয়েছে। বিএনপি ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল সহ সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠন দফায় দফায় প্রস্ততি সভা করে কর্মকৌশল নির্ধারণ করছে।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১৪টি উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশের বাইরে থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছেন। সমাবেশ করার জন্য নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্তর অথবা হাদিস পার্ক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে সিটি কর্পোরেশনের কাছে চিঠি দিয়েছেন বিএনপি। একই সঙ্গে কেএমপি কমিশনারকে অবহিত করা হয়েছে।
সমাবেশে আসার পথে নেতাকর্মীরা যেন কোনো বাধার সম্মুখীন না হন সে জন্য পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি বিএনপির সমাবেশ হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কোনো ধরনের বিশৃংখলা হবে না। তারা বলেছেন, আলোচনা করে পরে আমাদের জানাবেন। পুলিশ নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে। আমাদের আগের বিভাগীয় গণসমাবেশের সময় সব গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই আমরা বলেছি, এভাবে পরিবহন বন্ধ করা যাবে না। আমাদের সমাবেশে যারা আসবে তাদের যেন বাধা না দেওয়া হয় এবং তাদের ওপর যেন কোনো আক্রমণ না করা হয়।
দেশের মানুষ ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এ জন্যই বিএনপির আন্দোলনের প্রতি তারা সাড়া দিচ্ছে। ৪ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি সফল করতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। আশা করছি অন্যান্য বিভাগের মতো খুলনার সমাবেশ সফল করার মধ্য দিয়ে সরকারকে আমরা বার্তা দিতে পারবো, অবিলম্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিন। তা না হলে দুর্বার আন্দোলনে এ সরকারের পতন হবে।
এএজেড