কাঁচা সুপারি খেলে মাথা দিয়ে ধোঁয়া উঠে
বেশি পরিশ্রম করলে বা মেজাজ খারাপ থাকলে মানুষ বলে উঠে মাথা দিয়ে ধোঁয়া উঠছে। কিন্তু নাটোরের গোলাম রাব্বানীর বেলায় সত্যিই এমন ঘটনা ঘটছে। কথার কথা নয়, সত্যিই সত্যিই তার মাথা দিয়ে ধোঁয়া উঠছে। তবে মেজাজ খারাপ বা পরিশ্রমের কারণে নয়, শীতকালে কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খেলে তার মাথা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
পারিবারিকভাবে পান খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে নাটোরের বাগাতিপাড়ার চকগাজীপুর গ্রামের সবজান আলীর ছেলে গোলাম রাব্বানীর (৪০)। বর্তমানে প্রতিদিন তার প্রয়োজন হয় ২০-২৫টি পান। পানের সঙ্গে তিনি কাঁচা সুপারি, চুন আর কালোজিরা খান। স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ঘামার প্রবণতাও রয়েছে তার। গরমে ওই পান খেলে শুধু শরীরে ঘাম দেখা যায়। কিন্তু শীতে পান খেলে শরীর ঘেমে যাওয়ার পাশাপাশি মাথা দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। এ ঘটনায় তার খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে ধোঁয়ার মতো ওঠা ওই বাষ্প দেখতে শীত এলেই ভিড় করতে থাকে এলাকার মানুষ।
বিষয়টি জানার পর ওই ঘটনা তদন্তে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে রক্ত। তবে চিকিৎসকদের প্রাথমিক দাবি শরীর দ্রুত ঘামাই ওই ঘটনার মূল কারণ।
প্রত্যক্ষদর্শী শরিফুল জানান, কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খাওয়ার কিছু সময় পরেই ঘামতে শুরু করেন রাব্বানী। কিছুক্ষণ পর তার মাথা দিয়ে ধোঁয়ার মতো বাষ্প উড়ে যেতে দেখা যায়।
গোলাম রাব্বানী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গরমের সময় পান খেলে শুধু শরীর ঘামে, তবে ওই বাষ্প দেখা যায় না। আর শীতে ওই বাষ্প উড়তে দেখা যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, ছোটবেলা থেকেই অন্যদের তুলনায় তিনি বেশি আর দ্রুত ঘামেন। একই সঙ্গে কাজ করা বা হাঁটা অন্যজনের তুলনায়, তার শরীর আগে ও বেশি ঘামে। তবে ওই ঘামার পর শরীর আর মাথা কিছুটা ভারী মনে হলেও তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
তার স্ত্রী তানিয়া সুলতানা জানান, এর আগে ওই বিষয়ে ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। শরীরে কোলস্টেরলের সমস্যার কথা বলে ডাক্তার ওষুধ দেন। ওই ওষুধ খাওয়ার পর কিছুটা উপকার হয়েছে তবে ওই সমস্যা আছেই।
আন্তর্জাতিক গবেষণা তথ্যের বরাত দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, পানে ইউজিনল ও সুপারিতে অ্যারেকোলিন ও টারপিনিয়ল নামে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এগুলো শরীরের তাপ কিছুটা বাড়ায়, ঘাম সৃষ্টি করে এবং হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ বাড়ায়। পান-সুপারি আমাদের শরীরের জন্য মৃদু উত্তেজক। পান চিবানোর সময় মুখে লালার উদ্রেক হয় এবং লালার মাধ্যমেই পান-সুপারির রাসায়নিক পদার্থগুলো জিহ্বার নিচ দিয়ে রক্তনালিতে প্রবেশ করে। চুনে আছে ক্যালসিয়াম হাইড্র্রোক্সাইড। চুন-পান-সুপারির উত্তেজনা শক্তিকে কিছুটা দ্রুত, বর্ধিত ও দীর্ঘ করে। আবার হাইপারথ্যালামাস মস্তিষ্কের একটি অংশ যেটি শরীরে ঘাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
ওই হাইপারথ্যালামাসে ত্রুটির কারণেও অতিরিক্ত ঘাম হয়।
নাটোরের সিভিল সার্জন রোজী আরা খাতুন জানান, ওই ঘটনা তদন্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তিন সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বুধবার ওই ব্যক্তির পরীক্ষার জন্য রক্তসহ প্রয়োজনীয় নমুনা নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, শীতের সময় মানুষ কথা বললেও মুখ দিয়ে বাষ্প বের হতে দেখা যায়। ওই ব্যক্তি কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খাওয়ার পর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ঘাম বের হয়। ওই ঘাম বাষ্প আকারে মাথা দিয়ে বের হতে দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে এমন ধারণা তাদের। তবে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর ওই বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। যদি ওই ব্যক্তির কোনো সমস্যা পাওয়া যায় তবে তার প্রয়েজনীয় চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এসএন