নওগাঁয় আগাম জাতের শিম চাষে ভালো লাভের আশা চাষিদের
নওগাঁয় ধান-চাল ও আমের পাশাপাশি সবজিতেও সমৃদ্ধ এই জেলা। ইতিমেধ্য নওগাঁয় বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম নতুন শিম। বাজারে নতুন শিমের ভালো দাম থাকায় ভালো লাভের আশা করছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার আগাম জাতের শিম চাষ হয়েছে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিম চাষ হয়েছে নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ও কীর্তিপুর ইউনিয়নে।
সদর উপজেলার বর্ষাইল ও কীর্তিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠজুড়ে সবুজ শিম ক্ষেত। মাঠজুড়ে শিমের লতা-পাতার সবুজ সমারোহের মাঝে ফুটে থাকা গোলাপি সাদা ফুলের সঙ্গে বাতাসের দৃষ্টিনন্দন লুকোচুরি। নজর কাড়বে যে কারোর। এর মধ্যেই কিছু কিছু গাছে শিম ধরতে শুরু করেছে। সেগুলো শিম ক্ষেত থেকে তুলে বাজারে নিয়ে আসলে ভালো দামও মিলছে।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই শিম কৃষকদের কাছে ভাদ্রা শিম (ভাদ্র মাসের শিম) নামে পরিচিত। শিম চাষের জন্য জৈষ্ঠ্য মাসে জমি প্রস্তুত করে রোপন করতে হয়। রোপনের তিন মাসের পর ফুল আসা শুরু এবং বাজারে শিম বিক্রি শুরু হয়। এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করতে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর বিক্রি হয় ১ লাখ টাকার বেশি। এতে করে এই শিম চাষে ভালো লাভবানের আশা করছেন চাষিরা। তবে অতিরিক্ত রোদ, গরম ও পোকার আক্রমনে ফুল ঝড়ে যাওযায় এখনও আশানুরূপভাবে ক্ষেত থেকে শিম তুলে বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা।
সদর উপজেলা বর্ষাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের শিম চাষি আজিজুল বলেন, জৈষ্ঠ্য মাসে জমি প্রস্তত করে দেড় বিঘা জমিতে আগাম জাতে শিম চাষ করেছি। ১ বিঘাতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা করে খরচ হয়। শিমের ক্ষেতে ফুল এসে গেছে কিন্তু শিম কেবল ফুটতে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, এতদিনে প্রায় ২০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতাম। কিন্তু অতিরিক্ত রোদ, গরম ও পোকার আক্রমণে শিম ধরতে দেরি হচ্ছে। কীটনাশক দিয়েও কোনা লাভ হচ্ছে না।
আরেক শিম চাষি মোমতাজুল ইসলাম বলেন, এবার প্রায় ২ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। কয়েকদিন আগে ক্ষেত থেকে ৭ কেজি শিম তুলেছিলাম। পরে বাজারে ১২০ থেকে ১৫০ কেজিতে বিক্রি করেছি। বর্তমান বাজারে শিমের দাম ভালো আছে। এই রকম দাম থাকলে এক বিঘা জমি থেকে ১ লাখ টাকার বেশি শিম বিক্রি করতে পারব। কিন্তু আসতে আসতে শিমের দাম কমে যায়।
বাবুল হোসেন বলেন, ১০ কাঠা জমিতে আগাম শিমের আবাদ করেছি। প্রায় ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাজারে ৫ কেজি শিম বিক্রি করেছি। বর্তমানে শিমের দাম ভালো। এভাবে দাম থাকলে ভালো লাভবান হওয়া যাবে। প্রথমে পোকার আক্রমণে ফলন একটু কম হলেও পরবর্তীতে ফলন বেশি হয়। যখন ফলন বেশি হয় তখন আর আগের মতো দামও পাওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে নওগাঁ সদর উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রতন আলী বলেন, যারা আগাম জাতের শিম চাষ করেছেন তাদের অনেকের জমিতেই ফুল এসেছে। আবারও অনেকের জমিতে শিমও ধরতে শুরু করেছে ও বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এই শিমের ভালো দাম বাজারে রয়েছে। আশা করি আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে আগাম জাতের শিম চাষ যারা করেছে তারা লাভবান হবেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে অতিরিক্ত গরমের কারণে শিমের যে শোষক পোকা এইটার আক্রমণ একটু বেশি। আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকরা শিমসহ যেসব আগাম জাতের সবজি চাষ করেছে তাদের পোকা-মাকড় দমনসহ সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও আধুনিক চাষাবাদ ও বিষমুক্ত সবজি চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
এসআইএইচ