শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

সাবেক এমপির মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন বর্তমান এমপি, ভিডিও ভাইরাল

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সাবেক ও বর্তমান এমপির মাঝে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। এক পর্যায়ে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এ ঘটনা ঘটে। ভরা মজলিসে সাবেক সংসদ সদস্য ও বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কৃর্তপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয় সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার। এমন ঘটনায় নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুই মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেজবুকে ভাইরাল হয়।

দুই মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম উত্তেজিত স্বরে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর একই সাড়িতে বসে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর সামনে টেবিলে মাইক্রোফোন ফেলে দিয়ে আকরাম হোসেন চৌধুরীর কাছে তাকে ইঙ্গিত করে কেন বক্তব্য দিলেন তার ব্যাখ্যা জানতে চান। তখন আকরাম হোসেন চৌধুরী মাইক্রোফেন হাতে নিয়ে বক্তব্য দিতে লাগলে এর কিছুক্ষণ পর তার কাছে থেকে মাইক্রোফোন জোড় করে কেড়ে নেন নিয়ে তিনি আবার উত্তেজিত হয়ে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন বর্তমান এমপি।

ঘটনার সূত্রপাত কি নিয়ে:
ঠিক কি কারনে এমনটা ঘটলো বিষয়টি নিয়ে কথা হলে সাবেক সংসদ সদস্য ও বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কৃর্তপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান (বিএমডিএ) ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, ওইদিন আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। প্রতিপক্ষকরা ছোট করার জন্য অনেক সময় গালিগালাজ করে। কিন্তু যদি তিনি বুঝতেন এ গালিগালাজ তাকেই ছোট করবে তাহলে বলতো না হয়তো।

ড.আকরাম বলেন, ওই ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুটি ভাগ হয়ে গেছে। অথচ সকলেই বলে বিলাশবাড়ী আওয়ামী লীগের ঘাটি। যদি এমনটাই হয় তাহলে গত নির্বাচনে নৌকা কেন পরাজিত হলো। আমার প্রশ্ন হলো- যেখানে নৌকার ঘাঁটি ছিলো তাহলে হঠাৎ করে ভেঙে গেলো কেনো। তখন উদহারণ দিয়ে বলি- সত্যিকার অর্থে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন অনেক সময় আমরা অবহেলা করি। দল নিয়ে চিন্তা করি না। কিন্তু বিরোধী দলীয় যখন ক্ষমতায় থাকে তখন আমাদের অনেক চিন্তা করতে হয়। মরহুম ডেপুটি স্পীকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নু ১৭ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তার সময়ে দুই উপজেলায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। আমার সময়ে অনেক উন্নয়ন করেছি। উন্নয়ন হচ্ছে আমার সরকারের আমলে, আর বিএনপিরা সত্য-মিথ্যা বলে মানুষকে জাগ্রত করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছিলাম- 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকলে মন্ত্রী ও সচিব সহ বিভিন্ন দপ্তর সহযোগীতা করে। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ছলিম উদ্দিন তরফদার এমপি মাইক্রোফোন কেড়ে নেন। তাকে আমি বুঝাতেই পারিনি এ বক্তব্যের শেষ পয়েন্ট টা আসলে কি ছিলো। মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে তিনি নানান ধরণের তর্কবিতর্ক শুরু করে দিলেন। তার মনে হয়তো আঘাত লাগায় তিনি এমনটা করেছেন। কিন্তু তাকে কটাক্ষ বা লক্ষ্য করে কিছু বলিনি বা বলতে চাইনি। তিনি আমার প্রতি অবিচার করেছেন এবং লাঞ্ছিত করা হয়েছে সবার সামনে। তিনি হয়তো আমাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছিল। আমি ধৈর্য্য ধরে ছিলাম'।

কি বলছেন বর্তমান সংসদ সদস্য:
এ বিষয়ে নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার বলেন, 'আমি সেদিন বলেছিলাম সামনে সম্মেলন উপলক্ষে যে উদ্যেশে বর্ধিত সভা হচ্ছিল সে বিষয়ে আপনে (ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী) কথা বলেন। কিন্তু তিনি বর্ধিত সভার বিষয়ে না বলে তার সময়ে কি কি উন্নয়ন করেছেন সেসব কথা বলছিলেন। তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিলেন।

ওই ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী সিলেকশনে যদি ভুল হয় তাহলে ২০১৪ সালে আপনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের পরও কেন আমার কাছে পরাজিত হলেন। এর জবাব টা কে দিবে? একজন ভাল এমপি হতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক বা যোগাযোগ রাখতে হবে। এতে করে মন্ত্রী ও সচিবরা গুরুত্ব দিবেন। এটা দিয়ে তিনি আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন। এ কারণে তাকে ল্যাঙ্গুয়েজ (ভাষা) ঠিক রেখে কথাগুলো বলতে বলেছিলাম। কোন জায়গা কি বক্তব্য দিচ্ছেন আপনে। জনগন হচ্ছে ক্ষমতার উৎস ও মালিক। জনগন চাইলে সম্মান দিয়ে চেয়ারে বসাতে পারে আবার নামিয়েও দিতে পারে।'

মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি সেলিম বলেন, 'নৌকার জন্য যখন আপনার এতো ভালবাসা তাহলে মাইক্রোফোন নিয়ে একটু বলেন ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় কোথায় কার জন্য ভোট চেয়েছেন কি না বা তার কোন প্রমান দেখাতে পারবেন। তখন তিনি মাইক্রোফোন নিয়ে বললেন- ওই সময় বরেন্দ্র বহুমূর্খী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান থাকায় ভোট চাওয়া সম্ভব হয়নি। তখন আমি মাইক্রোফোন তার কাছ থেকে নিয়ে নেই। এটাই ছিল মূল কথা। তবে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার মতো আসলে ঘটনা হয়নি বলে জানান তিনি।'

তিনি আরও বলেন, 'এ বিষয়ে যদি কোন সংবাদ হয়, আমার কোন আপত্তি নাই । তবে এটা আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়। কোন সংবাদ আমরা চাইনা।'

যা বলছেন আওয়ামী লীগনেতা ও স্থানীয়রা:
জাহাঙ্গীর আলম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, 'বর্তমান এমপি অযোগ্যতার প্রমাণ দিলেন। তিনি এমপি হওয়ার যোগ্যতা রাখেননা। সবার সামনে একজন উচ্চ শিক্ষিক ও সাবেক এমপির কাছে থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়া উচিত হয়নি।'

ইউসুফ আব্দুল্লাহ নামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, 'এমন ঘটনার ধিক্কার ও নিন্দা জানাই। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্শন করছি সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।'

স্থানীয় বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেনের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, 'এটা দলীয় বিষয় তাই এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাইনা বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেয়।'

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলু বলেন, 'সেদিনের অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত ছিলেন। সাবেক ও বর্তমান এমপির মাঝে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে সামান্য ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। পরে ওটা নিরসন হয়েছে।
এএজেড

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত