দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীর গতি
প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের আওতায় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও তা এগোচ্ছে ধীর গতিতে। দ্বিতীয় দফায় এক বছর সময় বাড়ানোর পরও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৬০ ভাগ। চলছে নতুন করে আরও এক বছর সময় বাড়ানোর চেষ্টা। তবে এই ধীর গতির জন্য কাজ শেষ না হওয়ায় সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে আরও আকর্ষণীয় ও পর্যটক বান্ধব হয়ে উঠবে সাগর কন্যা কুয়াকাটা। এতে এই অঞ্চলের পর্যটন অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে সাগর তীরবর্তী সবুজ বেষ্টনী উজার করে বাঁধ উন্নয়নের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
প্রকল্পের আওতায় সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা, গঙ্গামতি, লতাচাপলী এলাকা ঘিরে ৩৮ কিলোমিটার রিং বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাঁধ উন্নয়ন ও সাড়ে ৭ মিটার উঁচুকরণ ও প্রোটেকশন নির্মাণ করা হবে।
জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের এ প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা, লতাচাপলী, গঙ্গামতি, মিস্ত্রিপাড়া, লেমুরচরসহ সাগর তীরবর্তী ৩৮ কিলোটিমার এলাকায় ৬ মিটার উচু পুরনো মাটির বাঁধ সাড়ে ৭ মিটারে উন্নীতকরণ, সৈকতের ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রটেকশন নির্মাণ ও ৩৫ কিলোমিটার খাল পুনর্খনন কাজের দায়িত্ব পায় চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিকো। ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় আরও এক বছর সময় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। কাজটি বিলম্বিত হওয়ায় ১০ কোটি টাকা বেড়ে নির্মান ব্যয় দাড়িয়েছে দেড়শ’ কোটি টাকায়। যথা সময়ে কাজটি শেষ না হওয়ায় কুয়াকাটা সৈকতের ভগ্নদশায় বিরক্ত হচ্ছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।
বরিশালের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুর রহমান মিরন বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ভাঙন থেকে সুরক্ষিত ও দৃষ্টিনন্দন হবে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। অথচ প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। এতে নির্মাণ ব্যয়ও ১০ কোটি টাকা বেড়েছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পর্যটকরা। ৮০ ভাগ এটেল মাটি ও ২০ ভাগ বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও মাটি না পাওয়ার অজুহাতে ৮০ ভাগ বালু ও মাত্র ২০ ভাগ মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বাঁধের স্থায়ীত্ব হুমকিতে পড়েছে।’
পরিবেশ ফেলো মুরাদ আহমেদ বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সৈকত লাগোয়া সবুজ বেষ্টনী উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের নামে সৈকত সংলগ্ন গঙ্গামতি এলাকায় বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া হাজার হাজার গাছ কেটে সেখানকার মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।’
উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক মো. মজিবর রহমান বলেন, করোনা মহামারিসহ নানা কারণে যথা সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। এক দফা সময় বাড়ানোর পর আরেক দফা সময় বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। কাজের গতি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
টিটি/