বরগুনায় প্রধান শিক্ষক নিজেই দিচ্ছেন নিয়োগ-অনুমোদন!
বেকার নারী-পুরুষদের টার্গেট করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া নিয়োগ ও প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে বরগুনার এক স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে। শনিবার (৫ মার্চ) বিকালে ভুক্তভোগীরা গণমাধ্যমের কাছে এ অভিযোগ আনেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহসিন মোল্লা উপজেলার শিক্ষিত বেকার নারী- পুরুষদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার কথা বলেও কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও প্রশাসনের উচ্চ মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।
আমতলী চাওড়া পাতাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অতুল চন্দ্র শীল অভিযোগ করেন, চার বছর আগে তার মেয়ে রিনাকে উত্তর পশ্চিম চিলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন শিক্ষক মহসিন মোল্লা। এরপর তাদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে একটি ভুয়া নিয়োগপত্র ধরিয়ে দেন।
তিনি বলেন, ‘মহসিন আমার ছাত্র। ওকে আমি ভালো জানতাম। আমার মেয়ের বেকারত্বের সুযোগে অন্তত আমার সাথে এ রকম করাটা ওর ঠিক হয়নি। অবাক লাগে, মহসিন যেখানে আমার মেয়েকে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছে বাস্তবে ওখানে ওই নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নেই। আমি এমন জঘন্য ঘটনার বিচার এবং আমার দেওয়া টাকা ফেরত চাই।’
অবসরপ্রাপ্ত এক স্কুলশিক্ষক মোতালেব বলেন, ‘৩-৪ বছর আগে আমার মেয়েকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে নগদ ২ লাখ টাকা নিয়েছে মহসিন। এখন পর্যন্ত চাকরির কোনো খবর নাই, টাকা চাইলে বিভিন্ন রকমের তালবাহানা করে।’
ভুক্তভোগী মকবুল আকন অভিযোগ করেন, তার মেয়েকেও চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখায় মহসিন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে ৫০ হাজার টাকা নিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো চাকরি দিতে পারেনি মহসিন। টাকা ফেরত চাইলে উল্টো আরও ২ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি।’
আরেক ভুক্তভোগী সেরাজ হাওলাদার বলেন, ‘৪ বছর আগে আমার ছেলে জহিরুলের চাকরির জন্য মহসিন আমার কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছে। আজ পর্যন্ত আমার ছেলের চাকরির কোনো খবর নেই।’
ভুক্তভোগী সোহরাব হাওলাদার বলেন, ‘৩ বছর আগে জমি বন্ধক রেখে মাদ্রাসায় চাকরির জন্য মহসিন মোল্লাকে ৮৫ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু চাকরিটাও হয়নি আর টাকাও ফেরত পাইনি।
আরেক ভুক্তভোগী নূহু মোল্লা অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে আড়াই লাখ টাকায় তাকে পশ্চিম চিলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন মহসিন। অথচ ওখানে এ নামে কোনো প্রতিষ্ঠানই ছিল না।
তিনি বলেন, ‘মহসিন শতাধিক বেকার নারী-পুরুষের সঙ্গে প্রতারণা করে জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।’
উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব সেকান্দরখালী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল হক অভিযোগ করেন, তার কাছ থেকে স্কুল অনুমোদনের কথা বলে ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে নিজের স্বাক্ষরিত ভুয়া অনুমোদনের কাগজ ধরিয়ে দিয়েছেন মহসিন।
তিনি বলেন, ‘অসংখ্য শিক্ষিত বেকার নারী-পুরুষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও দাতাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শিক্ষক মহসিন মোল্লা। আর সেই টাকা দিয়েই আমতলী পৌরশহরের বটতলা এলাকায় নির্মাণ করেছেন পাঁচ তলার আলিশান বাড়ি।’
এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক মহসিন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।’
এদিকে, আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষক মহসিন মোল্লার বিরুদ্ধে একাধিক মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ জানান, কোনো ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএসপি