শীতল পাটির গ্রাম চাঁদপুর
গরমে শান্তির পরশ পেতে শীতল পাটির জুড়ি মেলা ভার। তাই এসময় কদর বাড়ে শীতল পাটির। সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার চাঁদপুরের গ্রাম শীতল পাটির জন্য বিখ্যাত। শীত শেষে গরমের আবির্ভাবের শুরুতে শীতল পাটি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাটি কারিগররা।
গরমের কয়েক মাস শীতল পাটির কদর বাড়ে। তাই কাজের ব্যস্ততাও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চাদপুর গ্রামে আট বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৮০ বছর বয়সীরা শীতল পাটিতে বোনার কাজে জড়িত। আগের তুলনায় শীতল পাটির কদর কম হলেও থেমে নেই তাদের পাটি বুননের কাজ। এটিই তাদের সংসারের চাকা ঘোরানোর মাধ্যম। শীতল পাটিতে রঙিন স্বপ্ন বুনেন তারা।
পাটিশিল্পের কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহুকাল ধরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কামারখন্দের শীতল পাটি সমাদৃত হয়ে আসছে। এখানকার মুর্তাবেতির শীতল পাটির চাহিদাও প্রচুর। এ গ্রামের মানুষ শীতল পাটি বুনে তাদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম পাটিশিল্প। তীব্র তাপেও খুব গরম হয় না বলেই এ পাটিকে শীতল পাটি বলা হয়।
পাইত্রা মুর্তা নামে এক ধরনের বর্ষজীবী উদ্ভিদের কাণ্ড থেকে বেতি তৈরি করা হয়। পরিপক্ক পাটিগাছ কেটে পানিতে ভিজিয়ে তারপর পাটির বেতি তোলা হয়। এরপর ভাতের মাড় ও পানি মিশিয়ে বেতি জ্বাল দেওয়া হয়। এর ফলে বেতি হয়ে ওঠে মসৃণ ও সাদাটে। বেতির উপরের খোলস থেকে শীতল পাটি পরের অংশ তুলে বুকারপাটি এবং অবশিষ্ট অংশ চিকন দড়ি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে কামারখন্দ উপজেলার চাদপুর গ্রামের অধিকাংশ পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এরা সবাই পাটি বুনে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ গ্রামের মানুষ জমিতে মুর্তা বাগান করে বিক্রি করেছেন ও তা দিয়ে নিজেরা পাটি তৈরি করে আসছেন কয়েকশ’ বছর ধরে। এখানে শীতল পাটি, নামাজের পাটি ও আসন পাটি নামে তিন ধরনের পাটি তৈরি করা হয়।
৮০ বছর বয়সী শ্যামসুন্দর ছোট বেলা থেকে তৈরি করে আসছেন এ শীতল পাটি। তিনি বলেন, শীতল পাটি তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। বাবা দাদারা পাটি বুনতেন। তাদের দেখে এ পেশায় জড়ান। এক সময় শীতল পাটির খুব কদর ছিল। তাদের কাছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার আসত। অনেক পাইকার তাদের থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করতেন। এখনো তাদের শীতল পাটির কদর পুরো দেশ জুড়ে।
এ গ্রামের যুবক রবিউল ইসলাম বলেন, ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতাম। করোনার সময় চাকরি চলে যায় তখন বাড়িতে এসে বাপ-দাদাদের পেশাই বেছে নিয়েছি।
শ্রীমতি আদুরী রানী নামে এক বৃদ্ধা জানান, ছোট বেলা থেকে পাটি বুনে আসছি। একজন মেয়ে সপ্তাহে দুটো পাটি বুনতে পারে যার বাজার মুল্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এখন আমাদের শীতল পাটির কদর আগের মতো নেই। সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলে এ শিল্প টিকে থাকবে।
এসএন