জলবায়ু পরিবর্তনে নির্ধারিত সময়ের ১৫ দিন আগেই মধু সংগ্রহ শুরু
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে নির্ধারিত সময়ের ১৫ দিন আগেই শুরু হচ্ছে মধু সংগ্রহ। আগের বছরগুলোতে ১ এপ্রিল শুরু হলেও এবার ১৫ মার্চ থেকে মধু সংগ্রহ শুরু।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় সুন্দরবন অবস্থিত হলেও মূলত মধু পাওয়া যায় সাতক্ষীরা রেঞ্জে। এ কারণে, ১৮৮৬ সাল থেকে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে অনুষ্ঠান করে প্রতিবছর ১ এপ্রিল মধু সংগ্রহ করতে যান মৌয়ালরা। আর ১ এপ্রিল মধু সংগ্রহ শুরু হয়ে চলতো ৩০শে জুন পর্যন্ত।
কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছর ধরে খলিশা ফুলের মধু আগের চেয়ে ১৫-২০ দিন আগেই সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। আর ওই সময় মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে জেলেরা মধু চুরি করে নিয়ে যান। ফলে মৌয়ালরা অনুমতি নিয়ে প্রত্যাশিত মধু সংগ্রহ করতে পারেন না। এ কারণে, মৌয়ালদের অভিযোগ ও বন বিভাগ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে মৌয়ালরা জানান, 'সুন্দরবনে সবচেয়ে ভালো মানের মধু পাওয়া যায় খলিশা ফুল থেকে। মানের দিক থেকে এর পরেই গরান ও গর্জন ফুলের মধু। মৌসুমের একেবারে শেষে আসে কেওড়া ও গেওয়া ফুলের মধু। এসব মধুর ভিতরে বিশেষ করে খলিশা ফুলের মধু বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আর বিশ্বজুড়ে এই খলিশা ফুলের মধুর কদরও রয়েছে।'
বনবিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে মৌয়ালরা বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছর ধরে খলিশা ফুলের মধু আগের চেয়ে ১৫-২০ দিন আগেই সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। আর ওইসময় মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে জেলেরা মধু চুরি করে নেওয়ায় মৌয়ালরা প্রত্যাশিত মধু সংগ্রহ করতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে মৌয়ালরা এ বিষয়ে বনবিভাগকে অবগত করলে বনবিভাগ এবার মধু সংগ্রহের সময় ১৫ দিন এগিয়ে এনে ১৫ মার্চ করেছে।'
খোজঁ নিয়ে জানা যায়, গতবছর মধু ও মোম আহরণের জন্য ১ হাজার ১২টি অনুমতিপত্র (পাস) দেওয়া হয়েছিল। এসব অনুমতিপত্রের বিপরীতে ৬ হাজার ৭৯৭ জন মৌয়াল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের জন্য যান। ওইসময় মৌয়ালরা ৩ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৯০ টন মধু ও ১১৩ দশমিক শূন্য ৯ টন মোম আহরণ করেন।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, 'বেশ কয়েক বছর ধরে খলিশা ফুল আগে আসছে। ফলে মধুও আগে পাওয়া যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও এটা হচ্ছে। এ কারণে, সব দিক বিবেচনা করে মধু সংগ্রহ শুরুর তারিখ ১৫ মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছে।'
টিটি/