'বিকট শব্দে কিছুই শুনতে পাইনি, ভাইয়ার সঙ্গে আর কথাও হয়নি’
'গোলার আঘাত হানার সময় ভাইয়া বাইরে এসে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তবে কথার এক পর্যায়ে হঠাৎ করে একটি গোলা এসে পড়ে জাহাজটিতে। বিকট শব্দে কিছুই শুনতে পাইনি, ভাইয়ার সঙ্গে আর কথাও হয়নি।' বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ) দুপুরে কান্না জড়িত কণ্ঠে এ কথাগুলো বলছিলেন নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স।
নিহত হাদিসুর রহমান আরিফ (৩৩) বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। চার-ভাই বোনের মধ্যে হাদিসুর দ্বিতীয়।
গত বুধবার (০২ মার্চ) ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ 'বাংলার সমৃদ্ধি' রকেট হামলার শিকার হয়। এতে জাহাজে আগুন ধরে নিহত হন হাদিসুর। এ ঘটনায় তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
হাদিসের স্বজনরা জানান, প্রায় আট বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিভিন্ন জাহাজে চাকরি করেন হাদিসুর। বুধবার জাহাজ থেকে ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্সকে ফোন করেন হাসিদ। তবে বিকট শব্দের কারণে কিছুই শুনতে পারেননি তারা। হাদিসুর জাহাজের সামনে বাইরে অবস্থান করায় রকেট হামলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিহত হন।
বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, হাদিস আমার চাচাতো ভাইয়েয় ছেলে। ছোটবেলা থেকেই সে মেধাবী ছাত্র ছিল। চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে পাস করার পর ২০১৮ সাল থেকে ওই জাহাজে ছিল হাদিসুর। অবিবাহিত ছেলেটা সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিল ছয় মাস আগে।
আজ দুপুরে হাদিসুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের নিহত হওয়ার খবরে শোকে ভেঙে পড়েছেন হাদিসুরের মা-বাবা। শোকে মুহ্যমান পরিবারের অন্য স্বজনরাও। খুব সকাল থেকে হাদিসুরের বাড়িতে ভীড় জমাতে শুরু করে মানুষের। তার মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
হাদিসুরের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'বাড়িতে এসে ছেলের ঘরের কাজ ধরার কথা ছিল, ছিল বিয়ের কথাও। এখন সব কিছুই শেষ। আমি সন্তানের লাশ দেখতে চাই।'
অন্যদিকে মা আমেনা বেগম বাকরুদ্ধ। বলতে গিয়েও কিছুই বলতে পারছেন না। তিনিও স্মৃতি হিসেবে ছেলের কয়েকটি মেডেল হাতে নিয়ে হাউমাউ করে কান্না করে বলেন, 'আমার ছেলের লাশটা তোরা আইন্না দে'।
হাদীসের চাচাতো ভাই জসিম উদ্দীন বলেন, 'এবারে বাড়ি আসলে হাদিসের বিয়ে করার কথা ছিলো। এ জন্য পটুয়াখালীতে তার জন্য মেয়েও দেখা হয়েছিল। কথা ছিল আসার পর বিয়ের সব কিছু চুড়ান্ত করা হবে। তা আর হলো কই?'
জানা যায়, গত ২৪ ফ্রেরুয়ারি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি । ওই দিনই দেশটিতে রাশিয়ার হামলা শুরু হলে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে জাহাজে আটকা পড়েন ক্যাপ্টেন জি এম নুর-ই-আলম, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুকসহ ২৯ বাংলাদেশি নাবিক। ইউক্রেন হামলা শুরুর সপ্তম দিনে বাংলাদেশি জাহাজটিতে গোলার আঘাতের ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালে বিএসসির বহরে জাহাজটি যুক্ত হয়।
এসআইএইচ