রংপুরে নিরাপদ সবজি উৎপাদিত হলেও নেই বাজারজাতের ব্যবস্থা
রংপুরের কৃষকেরা উৎপাদন করছেন নিরাপদ সবজি। তবে সঠিক বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার অভাবে সবজি বিক্রি করে পাচ্ছেন না ন্যায্য দাম।
উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে পাঁচ শতাধিক কৃষক জৈব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রবি মৌসুমে পরিবেশবান্ধব নিরাপদ সবজি উৎপাদন শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট (আইপিএম) পদ্ধতিতে উপজেলায় এক বছরের জন্য শুরু হওয়া পাইলট প্রোগ্রাম চলবে তিন মৌসুম পর্যন্ত। জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মোট ১০০ একর জমিতে ৫০০ জন কৃষক এ সুবিধার আওতায় রয়েছেন। মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ ইউনিয়ন নিরাপদ সবজি চাষাবাদের অন্তর্ভুক্ত তকেয়া কেশবপুর, খাপুর, চুহড়, বিশ্বনাথপুর, আঠারোকোঠা, সালাইপুর, শালমাড়াটারীসহ একাধিক গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, তাদের সবজিক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কৃষক।
কৃষকের অভিযোগ, নিরাপদ সবজি উৎপাদন করতে খরচ ও সময় বেশি লাগলেও আলাদা বাজার ব্যবস্থা না থাকায় আগের পদ্ধতিতেই ফসল বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কষ্টার্জিত এসব সবজি।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বিশ্বনাথপুর পশ্চিম পাড়ার কৃষক মো. আবুল কাশেম জানান, সবজি আবাদে এবার কীটপতঙ্গ দমনে ফেরোমন ফাঁদ এবং রঙিন আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করেছেন। অথচ গত রবি মৌসুমে কীটনাশক ছিল তার অন্যতম অবলম্বন। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের কৃষিকাজে এবারই প্রথম সবজি ক্ষেতে মালচিং শিট ব্যবহার করেছেন এবং ফলনও ভালো হয়েছে।
কথা হয় তকেয়া কেশবপুর কালীগঞ্জ গ্রামের কৃষক মো. রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সাড়ে তিন একর জমিতে কীটনাশক ব্যবহার না করে রাসায়নিক সার সীমিত রেখে জৈব বালাইনোশক, জৈব সার ও গোবর ব্যবহার করে সবজি আবাদ করছেন। বর্তমানে ওই জমিতে তিনি করলার আবাদ করেছেন।
আঠারকোঠা গ্রামের কৃষক মোতাহার হোসেন জানান, বর্তমানে ২৫ শতক জমিতে শিম আবাদ করেছেন। কিছুদিন আগে আগাম ফুলকপির চাষ করেছিলেন। গত রবি মৌসুমে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার ছিল একটা নিয়মের মতো। কিন্তু এবার জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাইনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে সবজি আবাদ করায় গোবর ও জৈব সার ছিল প্রধান ব্যবস্থা। গত মৌসুমের চেয়ে এবার তার আবাদ করা শিম গাছ বেশ মোটা তাজা ও সতেজ হয়ে উঠেছে এবং কপির দানাও বেশ মোটা হয়েছে।
তবে বিশেষ ব্যবস্থায় এসব কৃষিপণ্য উৎপাদনের খরচ একটু বেশিই হয়। আর এসব পণ্য বাজারজাতকরণে আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। মোতাহার হোসেন ও রাশেদুল ইসলামসহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, এত পরিশ্রম ও যত্ন নিয়ে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করেও বিক্রির আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আগের পদ্ধতিতেই উৎপাদিত সবজির মতো স্বল্পমূল্যে বিক্রি করছেন। তাই নিরাপদ সবজি বিক্রির আলাদা ব্যবস্থাসহ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
পরিবেশবান্ধব নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে পায়রাবন্দ ইউনিয়নে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানকারী উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র সরকার বলেন, প্রকল্পের আওতায় পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ২০টি গ্রামে পাঁচ একর জমিতে নিরাপদ সবজি লাউ, ফুলকপি, শসা, করলা ও শিম আবাদ করা হচ্ছে। প্রতি দলে ২৫ জন করে মোট ৫০০ জন কৃষক রয়েছেন। প্রত্যেক কৃষককে রবি মৌসুমের কীটপতঙ্গ দমনে ফেরোমন ও রঙিন আঠালো ফাঁদ এবং জৈব সারসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে। এবারই প্রথম প্রতি গ্রুপের একজন করে মোট ১০ জনকে ২০ শতক জমির জন্য মালচিং শিট দেওয়া হয়েছে।
এটি ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, মালচিং শিট মাটিতে আর্র্দ্রতা ধরে রাখে, আগাছা হতে দেয় না, মাটিবাহিত রোগ নষ্ট করে এবং গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরি করে।
মিঠাপুকুরের সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বাবলু বলেন, নিরাপদ সবজি উৎপাদন স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তাদের জন্য একটি সুখবর। নিরাপদ সবজি বিক্রির ব্যবস্থা না নিলে কৃষক লাভবান হবেন না। পরবর্তী সময়ে কৃষক এ ধরনের সবজি আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। নিরাপদ সবজি বাজারজাতের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. সালাহ্ উদ্দীন সরদার বলেন, পরিবেশবান্ধব নিরাপদ ফসল উৎপাদনে প্রতি উপজেলায় নিরাপদ সবজি বিক্রির একটি কেন্দ্র করার চিন্তা করা হচ্ছে। যেখানে প্রকল্প এলাকায় নিরাপদ সবজি বিক্রি করা হবে। এতে কৃষক তাদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্য মূল্য পাবেন। আগামীতে এ প্রকল্প যাতে আরও ব্যাপক আকারে করা যায় এজন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
রংপুর কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মো. ওবাইদুর রহমান মণ্ডল জানিয়েছেন, প্রতি বছর তিন মৌসুমে রংপুর জেলার আট উপজেলায় ২৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে পরিবেশবান্ধব নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন কৃষকরা।
এসএন