বিদেশগামীদের আঙুলের ছাপ দিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে বিদেশগামীদের আঙুলের ছাপ নিতে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া সরকারি কার্যালয়ে বসে বেসরকারি ট্রাভেল কোম্পানির এজেন্ট ঘুষ নিচ্ছেন। আর ওই টাকা পরে কর্মকর্তারা মিলে ভাগ বাটোয়ারা করছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, 'ঘুষ' দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হন তারা। অবশেষে সংঘবদ্ধ চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে ঘুষ দিয়েই আঙুলের ছাপ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি বরগুনা জেলা আঞ্চলিক কার্যালয়ে আঙুলের ছাপ নেওয়া শুরু হয়। এর আগে এ জেলার বাসিন্দাদের বরিশাল গিয়ে আঙুলের ছাপ দিয়ে আসতে হতো। বরিশাল জেলার আঞ্চলিক কর্মকর্তা কেএম শাহাবুদ্দিন আহমেদ বর্তমানে বরগুনা জেলার সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু শাহাবুদ্দিন আহমেদ বরিশাল থাকায় বরগুনা অফিস পরিচালনা করেন জেলা জনশক্তি জরিপ কর্মকর্তা ফখরুল আহমেদ।
আঙুলের ছাপ দিতে আসা লোকজন জানান, প্রতিদিন গড়ে ওই অফিসে অর্ধশতাধিক লোক আঙুলের ছাপ দিতে আসেন। এর জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ২০০ টাকার সঙ্গে ভ্যাট ২০ টাকা জমা দিতে হয় ব্যাংকে। এ ছাড়াও সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অফিসে উপস্থিত হয়ে সরাসরি ২২০ টাকা জমা দিয়ে ছাপ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, জেলা জনশক্তি অফিসের প্রশিক্ষণ কক্ষে আবিদ করপোরেশন নামে ট্রাভেল এজেন্সির বরগুনা জেলা শাখা ব্যবস্থাপক স্বপন আহম্মেদ বসে বিদেশগামীদের ভিসাসহ অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। এরপর ছাপ দিতে আসা দুজন ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ঘুষ গ্রহণ করছেন।
বিদেশগামী ওই দুইজনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। বশির উদ্দীন বরগুনার পাথরঘাটা থেকে এসেছেন দুবাই যাওয়ার জন্য আঙুলের ছাপ দিতে।
তিনি জানান,অফিসে যাওয়ার পর সেখানকার ডাটা এন্ট্রি অপরাটের শিরিন আক্তার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ফি বাবদ ২ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে দরকষাকষি করে ১ হাজার ৫০০ টাকার বিনিময়ে রাজি হন এবং স্বপনের কাছে টাকা দিতে বলেন। পরে আমি স্বপনের কাছে দেড় হাজার টাকা জমা দিয়ে ছাপ দিয়ে আসি।
বশির বলেন, 'আমাদের বিদেশ যেতে আঙুলের ছাপ দিতেই হবে। কিছু করার নেই, ঝামেলা এড়াতে বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হয়েছে।'
একই অভিযোগ বামনা উপজেলার অনিক আহমেদের। তিনি জানান, তার কাছেও ২০০০ টাকা দাবি করা হয়। পরে শিরীনের মাধ্যমে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবস্থাপক স্বপনের কাছে দেড় হাজার টাকা দিয়ে ছাপ দিয়ে আসি।
ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি জানান, এখানে ঘুষ না দিলে নানা অযুহাতে হয়রানি করা হয়। অবশেষে ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়।
ভুক্তভোগী নাফিউল ইসলাম সিনহা বলেন, 'এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ট্রাভেল এজেন্সির স্বপনের মাধ্যমে 'ঘুষ' নিয়ে সেই টাকা জরিপ কর্মকর্তা ফখরুল ও সহকারী পরিচালক শাহাবুদ্দিনের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয়।'
টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর শিরীন আক্তার টাকা নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, আঙুলের ছাপ ফরমের জন্য আমি ৫০ একশ বা দুশ টাকা চেয়ে নেই। আমি মাস্টাররোলে কাজ করি। এটা নেয়াও যদি অতিরিক্ত হয়ে থাকে তবে আর নেব না। তবে দেড় বা ২ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
আবিদ করপোরেশন ট্যাভেল এজেন্সির বরগুনা জেলার শাখা ব্যবস্থাপক স্বপন আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, আমি মূলত ট্রাভেল এজেন্সির টিকেটিংয়ের কাজ করি।
সরকারি কার্যালয়ে বসে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি সুস্থ হয়ে আপনার সঙ্গে চা খাব।
জেলা জনশক্তি জরিপ কর্মকর্তা ফখরুল আহমেদে বলেন, 'এইটা নিয়া রিপোর্ট কইরেন না, তাইলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এখান থেকে চইলা যাবে। অনেক সাংবাদিক ভাইরা আমার কাছে চা খাইতে আসে।'
এসময় তিনি বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর ভিজিটিং কার্ড বের করে দেখান এবং তাদের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালান।
বরগুনা জেলার সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত ) শাহাবুদ্দিন আহমদে মুঠোফোনে বলেন, ‘অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি আগামাী বুধবার অফিসে আসব,আপনি অফিসে আসেন দেখা হবে।’
বরগুনা জেলা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, জনশক্তি অফিসের ঘুষের বিষয় সম্পর্কে আমিও অবগত। সেবার নামে বাধ্য করে নাগরিকদের কাছ থেকে ঘুষ আদায়কারী সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। ভুক্তভোগীদের কেউ আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে আমরা তাকে সহায়তা করব।
এসএন