অতি দরিদ্রদের কর্মসৃজন কর্মসূচি
দরিদ্রদের বাদ দিয়ে ভাড়াটে লোক দিয়ে প্রকল্পের কাজ
অতি দরিদ্রদের কর্মসৃজন কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পে দরিদ্রদের বাদ দিয়ে ‘মাটি কাটার দল’ ভাড়া নিয়ে করা হচ্ছে কাজ। অথচ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে এ প্রকল্পে রোজ হাজিরায় অতি দরিদ্রদের দিয়ে মাটি কেটে গ্রামীণ রাস্তা ঘাট মেরামত করার কথা ছিল। মাটি কাটার দল বাড়া নেওয়ায় যাদের জন্য এ প্রকল্প তারাই বাদ থাকছেন। বিফলে যাচ্ছে প্রকল্পের উদ্দেশ্য, বঞ্চিত হচ্ছেন সত্যিকারের উপকারভোগীরা।
সরেজমিন উপজেলার সুয়াইর ইউনিয়নের জনদপুর পশ্চিমের নতুন মসজিদ থেকে জনদপুর রুবেল মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতে এমন অনিয়ম দেখা গেছে। রাস্তা মেরামতের স্থানে কোনো সাইনবোর্ডও দেখা যায়নি। পাবই গ্রামের ১০-১২ জনকে ওই রাস্তায় মাটি কাটতে দেখা যায়। সড়কে মাটি ফেলা হয়়েছে যেনতেনভাবে। বৃষ্টি হলেই এ মাটি ধুয়ে যাবে।
তাদের মধ্যে ওসমান গনি, জহিরুল ইসলাম ও আসাদ মিয়া জানান, তারা এ রাস্তায় চুক্তিভিত্তিক মাটি কাটছেন। তারা ১৫ জন মিলে একটি দল গঠন করে শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় মাটি কাটার কাজ করেন। প্রতি হাজার ফিট মাটি ৪ হাজার টাকা দরে এখানে কাটছেন তারা। যদিও তাদের দাবি পাঁচ হাজার টাকা ছিল। কিন্তু ইউপি সদস্য চার হাজারের বেশি দিতে চাচ্ছেন না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রথম পর্যায়ে সাত ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে গ্রামীণ অবকাঠামো মেরামতের জন্য মোট ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এসব প্রকল্পের বরাদ্দ এক কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ইউনিয়নের জনদপুর পশ্চিমের নতুন মসজিদ থেকে জনদপুর রুবেল মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতে বরাদ্দ ৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
এ প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইকুল মিয়া। এতে ৪৩ জন অতি দরিদ্র লোক ৪০ দিন কাজ করবেন। তারা প্রতিদিন জনপ্রতি ৪০০ টাকা করে এ টাকা পাবেন। কাজের স্বচ্ছতার জন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিজ নিজ মোবাইল নম্বরে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রকল্প সভাপতি ভুয়া উপকারভোগীর তালিকা বানিয়ে নিজের লোকদের নামে মোবাইল সিম তুলে অন্য লোকজন দিয়ে মাটি কেটে অতি দরিদ্রদের টাকা হাতিয়ে নিতে চাইছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
জনদপুর গ্রামের কাজী আলম জানান, সড়কে মাটি ফেলা হচ্ছে যেনতেনভাবে। বৃষ্টি হলেই এ মাটি ধুয়ে যাবে। পাশে ঢালু করে মাটি ফেলার দরকার ছিল।
তিনি বলেন, এ সড়কে খুব বেশি হলে এক লাখ টাকার মাটি কাটা হয়েছে। এর বেশি কোনোভাবেই হবে না। তবে সড়কে তথ্যের সাইনবোর্ড থাকলে তারা এর প্রতিবাদ করতে পারতেন।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য সাইকুল মিয়া কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, ‘গ্রামে অতি দরিদ্র লোক পাওয়া যায় না। ফলে মাটি কাটার দল এনে কাজ করাতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে সুয়াইর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান সেলিম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে অনিয়মের বিষয়টি আমি দেখব।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, এ প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে শুনেছি। সঠিক নিয়মে কাজ না করলে বিল পাবে না। এর আগেও যারা এমনটা করেছে তাদের বিল দেওয়া হয়নি।
গ্রামে কাজের জন্য অতি দরিদ্র লোক পাওয়া যায় না- প্রকল্প সভাপতির এমন বক্তব্য মানতে নারাজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহম্মেদ আকুঞ্জি। তিনি বলেন, অনিয়মের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএন