সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ, ভোগান্তিতে সাত গ্রামের মানুষ
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভায় মরা তিস্তা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে এক বছর ধরে। এতে সাত গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ উপজেলা ও পৌর সদরের সঙ্গে যাতায়াতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
কাউনিয়ার হারাগাছ পৌরসভার প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষিনির্ভর চরাঞ্চলের চরচতুরা, টাংরিরবাজার, মায়ারচর, চরচারমাথা, হারাগাছ ইউনিয়নের চরপল্লীমারী, চরএকতা ও চর নাজিরদহ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করে। তিস্তা নদীর ওই স্থানে পারাপারে সেতু না থাকায় উপজেলা ও পৌর সদরের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ সহজ ছিল না। এ কারণে এলাকার লোকজনের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘবে ওই স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৮-২০১৯ ও ২০২০-২০২১ এ দুই অর্থবছরে হারাগাছ পৌরসভার উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে দুটি দরপত্রের মাধ্যমে নদীর এ স্থানে ৭৬ মিটার দীর্ঘ পাইল সেতুর নির্মাণকাজ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়। ২০১৯ সালে প্রথম আহ্বান করা দরপত্রে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সেতুটির গার্ডার, স্প্যান ও দুই পাশের দেয়াল নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মের্সাস মামুন কনস্ট্রাকশন। পরে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের প্রথম দিকে সেতুটির গার্ডার নির্মাণকাজ শেষ করে। কিন্তু সেতুর দুই সম্মুখ ভাগের দেয়াল আজও নির্মাণ করা হয়নি। অথচ কার্যাদেশে ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্মাণ শেষ করার কথা ছিল।
পৌর কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে দ্বিতীয় দরপত্রে প্রায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির স্লাব বিম ও রেলিং নির্মাণের কার্যাদেশ পায় নুর ইসলাম এন্টারপ্রাইজ নামে অন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছর পেরোলেও ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেনি।
সম্প্রতি দেখা যায়, নদীর ওই স্থানে নির্মাণাধীন সেতুর পিলারগুলো দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় লোকজন জানান, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা তামিরুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল মরা তিস্তা নদীর ওপর সেতু হবে।
তিস্তা নদীর মায়ারচর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা চরের মানুষ। নদীর উপর নির্ভর করে কষ্টে আমাদের দিন চলে। নদীর ওপরে সেতুটা হলে উৎপাদিত যে কোনো পণ্য সহজে আমরা জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে পারতাম। পাশাপাশি শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য যাতায়াত সহজ হতো।
চরপল্লীমারী গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ধানসহ উৎপাদিত অন্য কৃষিপণ্য সহজে জেলা সদরের বিভিন্ন বাজারে নিতে না পারায় আমাদের কম দামে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চর চরচতুরা গ্রামের কৃষক কুদ্দুছ আলী বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে যাতায়াত, চলাফেরা, হাটে পণ্য আনা-নেওয়ায় অনেক কষ্ট হয়। অসুস্থ রোগীকে সময় মতো চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।
হারাগাছ পৌরসভার ঠাকুরদাস গ্রামের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান বলেছেন, শুনেছি নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কাউনিয়ার হারাগাছ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মর্তুজা এলাহী বলেন, যেহেতু পৌর অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা সম্ভব ছিল না। তাই উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে দুই অর্থবছরে পৃথক দরপত্রের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম দরপত্রে কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক অসুস্থ থাকায় সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে। দ্বিতীয় দরপত্রে কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর বাকি কাজ শুরু করার তাগিদ পত্র দেওয়া হয়েছে।
রংপুরের কাউনিয়ার হারাগাছ পৌরসভার মেয়র এরশাদুল হক জানান, সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। দ্বিতীয় দরপত্রের কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্রুত কাজ শুরু না করলে কার্যাদেশ বাতিল করা হবে।
এসএন