কোথায় যাবেন কাছুয়ানী!
সারাদিন দুয়ারে-দুয়ারে ভিক্ষা করে রাতে ফিরে আসেন-পরিবার যেখানে থাকে। রাতের আশ্রয়ের ব্যাপারে অন্তত চিন্তাহীন ছিলেন কাছুয়ানী। কারণ, বাঁধে তার একটি ঘর আছে। গাদাগাদি করে হলেও রাতে ঘুমানোর জায়গা আছে! মাথা গোঁজার ঠাঁই আছে তার! কিন্তু সেই চিন্তাহীন জীবনে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো! হঠাৎ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাইকিং করে জানিয়ে দিল ৭ দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরাতে হবে! এখন কোথায় যাবেন কাছুয়ানী!
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে সংসার কাছুয়ানী বেওয়ার। বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। স্বামী মারা গেছেন ১৫ বছর আগে। একটি মেয়ে ছিল, তিনি এখন স্বামীর সংসারে। ছেলে কাশেম (২৫) কে নিয়ে ছেলের স্ত্রী আছমা ও দু’বছরের নাতিসহ তাদের সংসার।
শুধু কাছুয়ানী নয় ছবরুল, ছলিল, মোমেনা, মালেক, খালেক. মনির, রহিম সাধু, আক্কাস, আমিনুল, শহিদুলসহ প্রায় ৪০-৫০টি পরিবার ধরলার ভাঙনের শিকার হয়ে পরিবার নিয়ে কোথাও কোন মাথা গোজাঁর ঠাঁই না পেয়ে পাঁচ বছর ধরে বাঁধেই কোন রকমে একটি ঘর তুলে বাস করছিলেন। তারা এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন- এই চিন্তায় পড়ে গেছেন! পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘর-বাড়ি সরিয়ে নেওয়ার নিদের্শনা দিলে কাছুয়ানীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার চরম হতাশায় ভুগছেন!
সরেজমিনে উপজেলার চড়-বড়লই বাংলাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ি-ঘর সরানোর নির্দেশ পাওয়ার পর গত চার পাঁচ দিন ধরে চরম হতাশায় ভুগছেন ভিক্ষুক কাছয়ানীসহ অন্য পরিবারগুলো।
কাছুয়ানী বলেন, ‘আমরা এলা কনঠে যায় বাহে! কোন জমি-জমা নাই। বাঁধেই আমার ঠিকানা। এটাও যদি ভেঙে দেয় বা সরিয়ে ফেলতে হয় তাহলে আমরা কুনঠে যাবো। আমরার কি কুনু ব্যবস্তা হবি নে বাহে?’
স্থানীয় আশরাফুল নামে একজন শিক্ষক বলেন, ‘যারা ওয়াপদা বাঁধে ঘর তুলে বাস করছেন তাদের বেশিরভাগ ধরলার ভাঙনের শিকার। এ মুহূর্তে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নাই। সবাই গরীব-অসহায় ও দিনমজুর। প্রতিটি পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল। সবার চেয়ে কাছুয়ানীর অবস্থা বেশি খারাপ।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, ‘যারা পানি উন্নয়ন বাঁধে ঘরবাড়ি ও বাজারসহ অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে আছেন তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে সেখানে নতুন করে বাঁধ সম্প্রসারণের জন্য কাজ শুরু করা হবে।’ যাদের মাথা গোঁজার ঠাই নেই, সেই পরিবারগুলো কোথায় যাবে? কীভাবে তাদের বাসস্থান হবে এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান এখনও এ বিষয় নিদের্শনা পাওয়া যায়নি।’
/এএন