বরগুনায় কাফনের কাপড় পরে তিন বোনের অনশন
দখল হয়ে যাওয়া বাবার ভিটা ও জমি ফেরতের দাবিতে বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কাফনের কাপড় পরে অনশন করেছে তিন বোন।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চত্বরে অনশনে বসে তারা।
অনশনে বসা তিন বোন হচ্ছেন- রুবি আক্তার (২৭), জেসমিন আক্তার (১৮) ও মোসা. রোজিনা (১৬)। তারা জেলার বামনার গোলাঘাটা গ্রামের মৃত আবদুল রশীদের মেয়ে।
বড় বোন রুবি আক্তার জানান, ২০০৩ সালে তাদের বাবা আবদুর রশীদ মারা যান। তখন রুবির বয়স মাত্র ৭ বছর। বাবা মারা যাওয়ার এক বছর পর প্রতিবেশী ও দুঃসম্পর্কের খালা হাসিনা বেগমের সঙ্গে চট্টগ্রাম চলে যান রুবি। ওই খালার তত্ত্বাবধানে ৮ম শ্রেণিতে পড়াশোনা অবস্থায় ২০১৩ সালে পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।
পোশাক কারখানায় কাজ করে বাড়িতে থাকা মা ও ছোট দুই বোনের ভরণ-পোষণ চালাতেন রুবি। ২০১৪ সালের শুরুতে ছোট ভাই আল আমিনকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন এবং কাভার্ডভ্যানের সহকারী হিসেবে কাজ দেন। কিন্তু ওই বছরের শেষের দিকে দুর্ঘটনায় ভাই আল-আমিনের মৃত্য হয়। এর তিন বছর পর ২০১৭ রুবির মা খাদিজা বেগমও মারা যান।
বাড়িতে থাকা দুই বোন নিরপত্তাজনিত কারণে এলাকার এক আত্মীয়র বাড়িতে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান। মেজ বোন জেসমিন এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী, রোজিনা দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে।
২০১৯ সালে এলাকায় ফিরে বাড়িতে আসেন রুবি। বাড়িতে গিয়ে দেখেন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি প্রভাবশালী প্রতিবেশী আবদুল মান্নান, আশরাফ আলী ও শাহজাহান, সামসুজ্জামানগং দখলে নিয়েছেন।
রুবি বলেন, “২০১৯ সালে আমি বাড়িতে ফিরে জমি বুঝে পেতে চাইলে তারা বলে, আমাদের জমি নাকি নিলামে তারা কিনে নিয়েছেন। পরে উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে জানতে পারি, জমির কোনো নিলাম হয়নি।”
রুবি আরও বলেন, “বিষয়টি বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিবেক সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান লিটু মৃধা ও বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে অনশনে বসতে হয়েছে। বাবার জমি থাকতেও এখন নিজভূমে পরবাসী। আমরা অসহায় তিন বোন বাবার জমিটুকু ফেরত চাই। আমাদের দাবি ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ না পাওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন চলবে।”
জমি ও বসতি দখল প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে আবদুল মান্নান বলেন, “ওই জমি আমাদের। আমাদের কাছে কাগজপত্র আছে। ওদের কোনো জমি নাই।”
এদিকে, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক দুপুরের খাবার কিনে নিয়ে এসে তিন বোনের অনশন ভাঙান। এ সময় তিনি তিন বোনকে আশ্বস্ত করেন, জমি যদি তাদের হয়, তবে তা ফেরত এনে দিতে যা যা সহযোগিতার দরকার করবেন। পুলিশ সুপারের আশ্বাসে খাবার খেয়ে অনশন ভাঙেন তিন বোন।
পরে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তিন বোন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ওই তিন বোনের গ্রাম বামনার ঘোলাঘাটায় সরেজমিনে যান পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, “আমি সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। কাগজপত্র দেখেছি। জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঘর তুলে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।”
তবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এমএসপি