বিলুপ্তির পথে হাজংদের মাতৃভাষা
নেত্রকোনা সীমান্তে বন-পাহাড়ের বাসিন্দা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী হাজং সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা ‘হাজং’ ভাষা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। হাজং ভাষার লেখ্যরূপ না থাকা, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা আর সংখ্যাগুরু ভাষার প্রভাবের কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
নেত্রকোনার কলমাকান্দা-দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় হাজং সম্প্রদায়ের বসবাস। যাদের সংখ্যা খুবই অল্প।
ইউনেস্কোর হিসেবে পৃথিবীতে ভাষা রয়েছে ৬ হাজার ৭০০টি। এর মধ্যে চিরতরে হারিয়ে গেছে ২২৯টি। ২ হাজার ৫৮০টি ভাষা বিলুপ্তির পথে। এর অধিকাংশই ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ভাষা। হাজংদের ভাষা 'হাজং' একই পথের পথিক হয়ে গেছে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মৌখিক ভাষা থাকা সত্ত্বেও তা আজ বিলুপ্তির পথে। তা ছাড়া নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে পারলেও প্রধানত বাংলা ভাষা দিয়েই তাদের পথচলা। এখন তাদের অধিকাংশই বাংলা ভাষায় কথা বলেন।
অতীতে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী এ সম্প্রদায়ের মানুষরা নিজেদের মধ্যে তাদের ভাষায় কথা বলত। অন্য ভাষার প্রয়োজন হতো না। বর্তমানে বাংলা ভাষা চর্চা করতে হচ্ছে। বাংলা ভাষায় পাঠ্যবই পড়ছে। আবার উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীরা ইংরেজির দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এতে করে পারিবারিকভাবেও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের ভাষা অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। সংখ্যাধিক্যের ভাষা হিসেবে বাংলা ও প্রয়োজনের তাগিদে ইংরেজির দিকে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ বেশি।
কলমাকান্দার জয়ন্ত হাজং বলেন, এ ভাষায় কথা বলতে গিয়ে বাঙালি জাতির লোকেরা হাসাহাসি করে। আর হাজং ভাষায় কথা বলা সম্ভব নয়। যেজন্য এটি লোপ পেয়েছে। কারণ আমরা সংখ্যায়় কম। তাদের সংখ্যাই আমাদের লেনদেন বেশি হয়।
দুর্গাপুরে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর নিখিল হাজং বলেছেন, আমাদের ছেলে মেয়েদের এখন আর হাজং ভাষার জন্য দরদ নেই। তারা এই ডিজিটাল যুগে বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় কথা বলে। তবে এ ভাষা টিকাতে হলে সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ ভাষায় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা দরকার।
হাজং ভাষা চর্চায় কাজ করে আসা তরুণ উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর হাজং বলেন, নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় ১০টি ভাষা সাহিত্য চর্চা কেন্দ্র গড়ে তুলেছি, যা প্রাথমিক পর্যায়ে। সরকারি উদ্যোগে হাজং ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি।
টিটি/