পরীগঞ্জে বাবাকে পিটিয়ে হত্যা, ৪ বছর পর ছেলের দায় স্বীকার
রংপুরের পীরগঞ্জে ছেলের হাতে বাবা খুন হওয়ার চার বছর পর রহস্য উদ্ঘাটন করেছে জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে এক প্রেস বার্তায় বিষয়টি জানায় পিবিআই।
জানা গেছে, বাঁশ কাটাকে কেন্দ্র করে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বাবা দেলদার (৬০) এবং ছেলে সোহেল (৩৭)। একপর্যায়ে কাটা বাঁশ হাতে নিয়ে দেলদারের মাথার পেছনে আঘাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করেন ছেলে সোহেল। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দেলদার। পরে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’দিন পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ছেলে সোহেল মিয়াকে (৩৭) গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
পিবিআই রংপুর জেলার পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন জানান, নিজের ছেলে তার বাবাকে হত্যা করায় এবং ভিকটিমের পরিবারের লোকজন আন্তরিকভাবে সহায়তা না করায় মামলার রহস্য উদঘাটনে সময় লেগেছে। তবে দীর্ঘ ৪ বছর পরে হলেও হত্যার রহস্য উদঘাটন হওয়ায় জনমনে স্বস্তি এসেছে।
প্রেস বার্তায় পিআইবি আরও জানায়, ঘটনার প্রায় চার বছর পর এ খুনের রহস্য উন্মোচন করে সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। খুনের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি হলেন- সোহেল মিয়া (৩৭) তিনি হত্যার স্বীকার করেন। সোহেল নিহত দেলদার মিয়ার ছেলে।
আদালতে উপস্থাপন করা হলে আসামি সোহেল হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জে দেলদার মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে রক্তাক্ত দেলদার মিয়াকে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এর দু’দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পিবিআই আরও জানায়, পীরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে না পেরে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। তবে আদালত মামলাটির প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে রংপুর জেলার পিবিআইকে অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে এসআই শফিউল আলম মামলার তদন্ত শুরু করেন।
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিউল আলম জানান, তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে ও বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়।
তিনি আরও জানা, ঘটনার দিন দেলদারের দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে দেলোয়ারা বেগম তার শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে কিছু বাঁশ নেওয়ার জন্য আসেন। এ নিয়ে দেলদারের চতুর্থ স্ত্রী শাহার বানুর সঙ্গে দেলোয়ারা বেগমের ঝগড়া হয়।
ঘটনাস্থলের বাঁশঝাড়ে দেলোয়ারা বেগম বাঁশ কাটতে গেলে বাবা দেলদার মিয়া সেখানে গিয়ে বাধা সৃষ্টি করেন। তখন সোহেল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তার বাবার সঙ্গে বাক-বিতণ্ডয় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে বাঁশঝাড়ে থাকা কাটা বাঁশ নিয়ে বাবা দেলদারের মাথার পেছনে আঘাত করেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
পরে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’দিন পর তিনি মারা যান।
তদন্তে পাওয়া আসামি নিহতের মেজো ছেলে সোহেল মিয়া। পিবিআই তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে উপস্থাপন করলে তিনি বাবাকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।
পিবিআই রংপুর জেলার পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন বলেন, “আপন ছেলে তার বাবাকে হত্যা করায় এবং পরিবারের লোকজন আন্তরিকভাবে সহায়তা না করায় মামলার রহস্য উদঘাটনে সময় লেগেছে। তবে দীর্ঘ ৪ বছর পরে হলেও হত্যার রহস্য উদঘাটন হওয়ায় জনমনে স্বস্তি এসেছে। দ্রুততম সময়ে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।”
এমএসপি