মদনে ৭৭ বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার
রাত পোহালেই একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্মরণে পালিত হবে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিতে ঢল নামবে অগণিত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, নেত্রকোনার মদন উপজেলার ৭৭ বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার।
স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণই করা হয়নি। তবে বাঁশ বা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মদন উপজেলায় মোট ৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৬৭টি বিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার। অপরদিকে, উপজেলায় ১৭টি উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।
বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকার কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্যালয়গুলোয় শহীদ মিনার নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ না দেওয়া হয় না। তবে কোনো কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বরাদ্দ বা দাতাদের অনুদান সংগ্রহ করে কিংবা বিদ্যালয়ের মেরামত ও আনুষঙ্গিক খাতের (স্লিপ) টাকা বাঁচিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। তবে বেশির ভাগ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে তা করা সম্ভব হয় না।
এদিকে, শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে তিনটি ডিজাইন চূড়ান্ত করে পাঠানো হয়েছে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে। কিন্তু কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তাই শুধু অর্থসঙ্কটের কারণেই অনেক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই এমনটি নিশ্চিত হওয়া গেছে শহীদ মিনার না থাকা কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ বলেন, “নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও একুশের চেতনায় উজ্জীবিত করতে প্রতিটি বিদ্যালয়েই শহীদ মিনারসহ এ ধরনের স্মারক থাকা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।”
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য একটি নির্দেশনা পেয়েছি। যে ডিজাইনে শহীদ মিনার নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে এর জন্য প্রায় ৬০/৭০ হাজার টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এর জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
স্থানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে শহীদ মিনার নির্মাণ করা কষ্টসাধ্য। তাই অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মান হয়নি।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, “অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকার কারণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদানের কিছুটা সমস্যা হবে। তবে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্টানকে অবহিত করা হয়েছে। শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব।”
এমএসপি