মানসিক ভারসাম্যহীন এক বাংলাদেশি যুবককে আটক করেছে বিএসএফ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে লুৎফর রহমান (২২) নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন বাংলাদেশি পথ ভুলে সীমান্ত এলাকায় গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাকে আটক করে। আটকের আট দিন পাড় হলেও ফেরত দেয়নি বিএসএফ। আটক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের বাড়ি ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের নাওডাঙ্গা গ্রামে। তিনি ঐ এলাকার রাজমিস্ত্রি সেলিম মিয়ার ছেলে।
আটক যুবকের বাবা সেলিম মিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে ফেরত পেতে বালারহাট বিজিবি ক্যাম্পে মৌখিকভাবে জানান। পরে শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে বালারহাট বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা মৌখিকভাবে ভারতের নারায়ণগঞ্জ ও করলা ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যদের জানালে আটকের ৭ দিন পর শনিবার ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকালে বালাতাড়ি সীমান্তের আন্তজার্তিক মেইন পিলার ৯৩১ এর সাব পিলার ২ এসের পাশে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে এক সংক্ষিপ্ত পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নের্তৃত্ব দেন লালমনিরহাট ১৫ বিজিবির অধীন বালারহাট ক্যম্পের নায়েক সুবেদার আব্দুল হানিফ ও বিএসএফের পক্ষে নের্তৃত্ব দেন ৯০ ব্যাটালিয়নের অধীন করলা ক্যাম্পের এসআই বিশ্বনাথ।
মাত্র পাঁচ মিনিটের বৈঠকে বালারহাট ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আব্দুল হানিফ আটক মানসিক ভারসাম্যহীন বাংলাদেশি যুবক লুৎফর রহমানের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত হন এবং বিএসএফের কাছে আটক বাংলাদেশি যুবককে ফেরত চাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরলে ভারতীয় বিএসএফের এসআই বিশ্বনাথ জানান, আটক বাংলাদেশি যুবককে কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
বিএসএফ আরও জানায়, আটক বাংলাদেশি যুবক দিনহাটা থানা পুলিশের হেফাজতে দিনহাটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি আটক বাংলাদেশি যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী বলে প্রমাণ হয়ে থাকলে তাকে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন করলা ক্যাম্পের বিএসএফের এসআই বিশ্বনাথ।
সীমান্তবাসী ও আটক যুবকের স্বজনরা জানান, উপজেলার বালাতাড়ি সীমান্তঘেষা এলাকার মোশারফ হোসেনের বাড়িতে গত এক সপ্তাহ ধরে ঘর নির্মাণের কাজ করেন লুৎফর রহমানের বাবা সেলিম মিয়া। বাবার সঙ্গে লুৎফর রহমানও মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করে।
১৩ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) রাত ১০টার দিকে পথ ভুলে বালাতাড়ি সীমান্তের আন্তর্জাতিক ৯৩১ এর সাব পিলার ২ এসের পাশে গেলে তাকে চোরাকারবারি ভেবে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে ধরে নিয়ে যায় কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার অধীন নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ।
এ দিকে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে অনেক খোঁজাখুজির পর কোথাও না পেয়ে বাবা-মা খুবেই চিন্তিত ছিলেন। ১৫ ফেবব্রুয়ারি রাতে হঠাৎ ছেলের ফোন থেকে কল আসে। হিন্দি ভাষায় কথা বলে পরিচয় দেন ভারতীয় বিএসএফ। পরে পরিবার নিশ্চিত হন ছেলে পথ ভুলে সীমান্ত এলাকায় যাওয়া বিএসএফ ধরে নিয়ে গেছে।
আটক যুবকের বাবা- সেলিম মিয়া তার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে ফেরত পেতে দুই দেশের সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, লুৎফর মানসিক রোগী। সে তার বাবাসহ সীমান্ত এলাকায় মিস্ত্রী কাজ করেন। এক সময় বাবাকে না বলে সে ভুলবশত সীমান্ত অতিক্রম করলে টহলরত বিএসএফ তাকে ধরে নিয়ে যায়। আটকের ৮ দিন পার হলেও আমরা তাকে ফেরত পাইনি পরিবার। বিজিবি ছেলেটাকে ফেরত আনতে খুবই প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আসলে ছেলেটা মানসিক রোগী, ছেলেটা ফেরত আসুক এটা আমরাও চাই।
এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবির অধীন বালারহাট ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আব্দুল হানিফ রবিবার সকালে জানান, বিএসএফের সাথে কথা হয়েছে। আটক যুবককে বিএসএফ সদস্যরা দিনহাটা থানায় সোপর্দ করেছে। সে দিনহাটা হাসপালে চিকিৎসাধীন আছে। তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মানসিক রোগীর সত্যতা পাওয়া গেলে তাকে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএসএফ। তারপরেও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
টিটি/