লবণাক্ত জমিতে সবজি চাষ, স্বাবলম্বী উপকূলীয় নারীরা
সিডর, আইলা, বুলবুল ও আম্পানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে নদীভাঙন ও লবণাক্ততার আগ্রাসনকে পেছনে ফেলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনিতে সবজি চাষে সফল হয়েছেন নারীরা। একই সঙ্গে গৃহপালিত পশুপালন করেও জীবনমানের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তারা।
শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার মাটি লবণাক্ত হওয়ায় এসব অঞ্চলে সাধারণত চিংড়ি চাষ করা হয়। এ অঞ্চলের পুরুষরা চিংড়ি ঘের ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সামান্য আয়ে পুরো পরিবারের খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তবে নারীদের সবজি চাষের পর এ অবস্থার উন্নয়ন হয়েছে।
কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় দুই উপজেলার নারীরা এখন লবণাক্ত জমিতে সবজি চাষ ও পশু পালন করে এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার আনুলিয়া, প্রতাপনগর, পদ্মপুকুর, মুন্সিগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের জীবনমান উন্নয়নে সক্রিয় গৃহিণীদের ছাগল, ভেড়া, সবজি বীজ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ অনুয়ায়ী সবজি চাষ ও গৃহপালিত পশু পালন করে এসব অঞ্চলের নারীরা তাদের পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উৎপাদিত ফসলসহ গৃহপালিত পশু বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
পোড়াকাটলা গ্রামের অর্চনা রাণী, ভামিয়া গ্রামের সুচিত্রা আউলিয়া, তাপসী দাস, পিংকী রাণীসহ বেশ কয়েকজন নারী জানান, উপকূলীয় এলাকায় নারী-পুরুষদের জন্য সেভাবে কর্মসংস্থান নেই। এ কারণে বছরের অধিকাংশ সময় পুরুষ সদস্যরা বাড়ির বাইরে অবস্থান করেন জীবিকা নির্বাহের জন্য। তবে সংসারের খরচ, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচসহ বিভিন্ন কারণে স্বামীর আয়ের উপরে নির্ভর করতে হয়। এতে করে অনেক সময় সমস্যায়ও পড়েন তারা। তবে বর্তমানে গৃহপালিত পশু পালন ও সবজি চাষ করে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করতে পারছেন তারা।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, তারা বিনামূল্যে ছাগল, ভেড়া ও হাসঁ দিচ্ছেন। এটি একটি দারুণ উদ্যোগ। আধুনিক পদ্ধতিতে পশু পালনের প্রশিক্ষণ আমরা ইতোমধ্যে দিয়েছি। এ ছাড়া যখন যে টিকা আমাদের হাতে আসবে তা দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
এবিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম এনামুল বলেন, লবণাক্ত এলাকায় উন্নত জাতের বীজ দিয়েছেন সংস্থাটি। আমরাও এরই মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদের জন্য নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমাদের কাছে উন্নতজাতের বীজ এলে আমরাও এ নারীদের মধ্যে বিতরণ করব। যাতে তারা স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন।
এসএন