ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করে অবরুদ্ধ স্কুলছাত্রী ও পরিবার
বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে স্কুলছাত্রী ও তার পরিবার।
অভিযোগ, মামলার পর ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, হত্যা ও পরিবারকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে অভিযুক্ত প্রতিবেশী। এ অবস্থায় আইনি প্রতিকার ও নিরাপত্তার দাবি করেছে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর পরিবার।
ওই স্কুলছাত্রীর মা জানান, তিনি স্থানীয় একটি বাজারের সড়কের পাশে পিঠা বিক্রি করেন। ২০১৪ সালে পাঁচ কন্যা সন্তান রেখে স্বামী মারা যান। এরপর থেকে তিনি পিঠা বিক্রি করেই সন্তানদের লালন-পালন করে আসছেন। ইতোমধ্যে তিন মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। চতুর্থ মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
তবে প্রতিবেশী মোশারফ হোসেনের ছেলে নাইম ইসলাম গত দুই বছর ধরে দশম শ্রেণি পড়ুয়া ওই মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। এ নিয়ে নাইমের মা-বাবা ও এলাকার গণ্যমান্যদের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোনো ফল হয়নি বরং স্কুলে যাওয়া-আসার পথে নাইম উত্ত্যক্তের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে, প্রতিদিনের মতো গত ৮ জানুয়ারি বিকালে মেয়েদের বাড়িতে রেখে তিনি পিঠা বিক্রি করতে যান। সন্ধ্যায় নাইম তাদের বাড়িতে এসে ঘরে ঢুকে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় স্কুলছাত্রীর চিৎকারে বড় দুইবোন এগিয়ে এসে নাইমকে ধরে ফেলে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নাইম তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এরপর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চান ওই স্কুলছাত্রী। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মেয়েকে নিয়ে ওই স্কুলছাত্রীর মাকে বরগুনা সদর থানায় যেতে বলেন। পরে থানায় গিয়ে বিস্তারিত খুলে বলেন তারা।
এরপর ১১ জানুয়ারি স্কুলছাত্রীর মা বাদি হয়ে বরগুনা সদর থানায় নাইমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
এ বিষয়ে স্কুলছাত্রীর বড়বোন জানান, আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে ঢাকাতে থাকি। ছোটবোনকে নিয়ে ঝামেলার খবর শুনে বাড়িতে এসে অনেকের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি বরং অভিযুক্তরা ক্ষেপে গিয়ে আমার বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ঘরে এসে ছোটবোনকে ধর্ষণ চেষ্টা করায় ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সহায়তা চেয়েছি।
পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর মামলা করার পরামর্শ দেয়। মামলা পর নাইম আমার বোনকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া শুরু করে। এ ছাড়া মামলা তুলে না নিলে এলাকা ছাড়া করা হবে বলেও নাইমের পরিবার হুমকি দিয়ে আসছে।
তিনি জানান, নাইমের পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী। তাদের পক্ষ হয়ে আত্মীয়-স্বজনদের অনেকে টাকা-পয়সা নিয়ে বিষয়টি মিটমাটের জন্য আমাদের প্রস্তাব দিচ্ছে। কিন্তু আমরা এ ঘটনার বিচার চাই, আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা চাই।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী বলে, “মা পিঠা বিক্রি করে, আমি ছোটবোন নিয়ে বাড়িতে থাকতাম। কিন্তু ঘটনার পর আমাদের নিরাপত্তার জন্য পিঠা বিক্রি বন্ধ রেখে মা এখন ঘরে থাকছেন। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা বিপদে পড়েছি। নাইমকে এলাকায় বখাটে হিসেবে সবাই চেনে। শুধু আমি না, সে আরো অনেককে উত্ত্যক্ত করেছে। মামলা করায় এখন আমাদের গোটা পরিবার একপ্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি।”
এ ব্যাপারে স্কুলছাত্রীর মা বলেন, “পাঁচটি মেয়ে রেখে ওর বাবা মারা যাওয়ার পর আমি পিঠা বিক্রি করে সন্তানদের ভরণপোষণ চালিয়ে আসছি। আমার ও মেয়েদের নিরাপত্তা ও হুমকির ভয়ে এখন পিঠা বিক্রি বন্ধ রেখেছি, নয়ত আমার মেয়েকে আমি নিরাপত্তা দিতে পারছি না।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য বলেন, “স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে তার মা আমার কাছে বলেছিল। আমি নাইমের মা-বাবাকে ডেকে ছেলেকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছি। ওইদিন ঘটনার সময় স্কুলছাত্রীর পরিবার বিষয়টি জানিয়েছিল। আমি পুলিশের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।”
ইউপি সদস্য আরও বলেন, “নাইমের বিষয়ে এলাকার মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার আরও অভিযোগ আছে। ঘটনার পর থেকে নাইম পলাতক। বাড়িতে গিয়ে নাইমের বাবা মোশারফ হোসেনকে পাওয়া যায়নি।”
ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মামলা ও হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে মা লিপি বেগম বলেন, “ওই মেয়েরা ভালো না। এলাকায় ওদের অনেক বদনাম আছে। আমার ছেলে সেদিন ঘরের পাশ দিয়ে যাবার সময় মেয়েরা ধরে মেরেছে। আমিও মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু থানা মামলা নেয়নি। আমরা ওদের কোনো হুমকি দেইনি। তবে বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য চেষ্টা চলছে।”
বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আহমেদ বলেন, “স্কুলছাত্রী মা বাদী হয়ে ১১ জানুয়ারি থানায় মামলা করেছে। থানার একজন ইন্সপেক্টরকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসামি নাইম পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আমরা স্কুলছাত্রী ও তার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।”
এমএসপি