সব সময় সুদিন থাকবে না: তথ্যমন্ত্রী
পরীক্ষিত সৈনিকদের হাতে মূল নেতৃত্ব থাকবে জানিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “সব সময় সুদিন থাকবে না। সব সময় একটি দল ক্ষমতায় থাকবে সেটি মনে করা সমীচিন নয়।”
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নওগাঁ পৌর শাখা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “জনগণ যদি আমাদের পক্ষে রায় দেয় তাহলে আবারও আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যাবো। কিন্তু যেকোনো পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। যারা ক্ষমতার হালুয়া-রুটি নেওয়ার জন্য, পিঠ বাঁচানোর জন্য দল করেন তাদের নেতৃত্বে বসানো যাবে না।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা ১৩ বছরে নতুন করে আওয়ামী লীগ হয়েছে তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার দরকার নাই। তবে তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ করবে। আওয়ামী লীগ জনসংগঠন। এখানে সবার স্থান আছে। কিন্তু পরীক্ষিত সৈনিকদের হাতে মূল নেতৃত্ব থাকবে। যারা দুঃসময়ে পাশে ছিল। যারা জায়গা দখল, মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং উদ্বৃত্ত আচরণ করে দল ক্ষমতায় বলে তাদের নেতৃত্ব বসানো যাবে না। তাই সঠিক নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে।”
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। খলনায়ককে নায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন বাংলাদেশের জিডিপি ছিল ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বর্তমানে জিডিপি ৮ শতাংশ। স্বাধীনতার এতো বছর পরও আমরা বঙ্গবন্ধুর রেকর্ড ভাঙতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে সমৃদ্ধ করতে চেষ্টা করেছিল তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল উন্নত সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ার। বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শহরের পাশাপাশি সমান তালে গ্রামও এগিয়ে যাচ্ছে। এখন গ্রামের ছেলে-মেয়ে ও শহরের ছেলে-মেদের কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন কুঁড়ে ঘর ও মেঠোপথ খুঁজে পাওয়া যায় না। দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাকিস্তান।”
বিএনপিকে নিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি এখন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত। দেশের উন্নয়নে দেশের মানুষ খুশি হচ্ছে কিন্তু বিএনপি অখুশি। খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাতেও মির্জা ফখরুল ইসলামরা অখুশি হচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশে যেভাবে গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আশপাশের দেশেও এ ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সবাই যখন সার্চ কমিটি নাম জমা দিয়েছে সেখানে তারা হাত গুটিয়ে বসে আছে। যেখানে সার্চ কমিটিতে তিনশতাধিক নাম পড়েছে, সেখানে বিএনপি ঘরে বসে থাকলেও কিছু আসে যায় না। অনেকে বলছে- বিএনপি আসলে অন্যদের মাধ্যমে নাম জমা দিয়েছে।”
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “যখন সমাজের সকল স্তরের মানুষ ও রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন কমিশন গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যখন সবাই গিয়ে সার্চ কমিটির সঙ্গে দেখা করলো এবং নাম জমা দিলো তখন বিএনপি আসামির কাঠগরায় দাঁড়ালো। সেই আসামির কাঠগরাই দাঁড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আসামির জবানবন্দি হিসেবে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।”
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ক্ষমতায় থাকলে বিনয়ী হতে হয়। ক্ষমতায় থেকে যারা উদ্বৃত্ত আচরণ করে সমস্ত উন্নয়নে মানুষ খুশি হয় না। এতে মানুষ বিরক্ত হয়। ক্ষমতায় থাকলে বিনয়ী হতে হয় সব নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানান তিনি।
যদি কেউ উদ্বৃত্ত আচরণ করে তাকে সংশোধন হওয়ার সময় দিতে হবে। তারপরও যদি সংশোধন না হয় দল থেকে বের করে দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য ও জনসেবা বিষয় সম্পাদক ড. রোকেয়া সুলতানা, নওগাঁ-২ পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসনের সাংসদ ছলিম উদ্দিন তরফদার, নওগাঁ-৪ সদর আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, নওগাঁ-৫ (রানীনগর-আত্রাই) আসনের সাংসদ আনোয়ার হোসেন হেলাল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক জাভেদ জাহাঙ্গীর সোহেল ও নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন- নওগাঁ পৌর শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী।
এর আগে বুধবার দুপুরে নওগাঁ জিলা স্কুল মাঠে নওগাঁ পৌর শাখা আওয়ামী লীগ এর আয়োজন করে। নওগাঁ পৌর শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণে সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ আট বছর পর নওগাঁ পৌর শাখা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এমএসপি