টাঙ্গাইলে ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ১৫৩ ইটভাটা
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে টাঙ্গাইলে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ইটভাটা। আর এগুলোর অধিকাংশই কৃষি জমি, বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী জেলায় বর্তমানে বৈধ ইটভাটার চেয়ে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া যেগুলোর ছাড়পত্র রয়েছে তার মধ্যে অনেকগুলোই পরিবেশ আইন না মেনেই অনুমতি পেয়েছে বলে অভিযোগ পরিবেশবাদীদের। এতো অবৈধ ইটভাটা কীভাবে পরিবেশের ছাড়পত্র পেল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ মানুষ।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জেলায় মোট ২৮২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৯টির পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন রয়েছে। বাকি ১৫৩টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। কিন্তু যেগুলোর অনুমোদন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর ক্ষেত্রেই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারি করা ১৯৯২ সালের প্রজ্ঞাপনে কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ এসব ভাটায় দেদারছে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি। এতে করে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ইটভাটায় কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
আর ইট তৈরির মৌসুমকে ঘিরে ভাটাগুলোতে মজুদ করা হয়েছে বিশাল আকারের মাটির স্তুপ। এতে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত ওই ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান।
সরেজমিনে জেলার ঘাটাইল, কালিহাতী, মধুপুর, ধনবাড়ী ও ভূঞাপুরসহ উপজেলাগুলোতে দেখা যায়, কৃষিজমিতেই গড়ে উঠেছে অধিকাংশ ইট ভাটা। এ ছাড়া ইটভাটাগুলোর আশপাশে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বসতভিটা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার কারণে জমিতে আর আগের মতো ফসল হচ্ছে না। গাছে ফলও হচ্ছে না ঠিকমতো। আম কাঠালসহ অধিকাংশ ফলের ফলন কমে গেছে। আর ধানের মৌসুমে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ছাইয়ের কারণে ধান চিটা হয়। এ ছাড়া ভাটা থেকে যে ধোঁয়া হয় তাতে শ্বাস নিতেও সমস্যা হয়।
এদিকে, ইটভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। এতে একদিকে যেমন উজার হচ্ছে বন অন্যদিকে হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ।
এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড.মো.মাহবুবুল আলম বলেন, ‘জমির উপরের ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি মাটি উর্বর বেশি থাকে। যা ফসল উৎপাদনে খুবই সহায়ক। কৃষকদের অস্বচ্ছলতার সুযোগে ভাটা মালিকরা জমির মালিকদের উদ্বুদ্ধ করে ইট তৈরির জন্য কৃষি জমির উপরের মাটি কিনছেন। ভাটায় প্রতি বছর উপরের মাটি ব্যবহার করায় জমির উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। আর কৃষকরা জমিতে সারের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
এভাবে উপরের মাটি তুলে নেওয়া অব্যাহত থাকলে ভতিষ্যতে জমিগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান এ অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘আর যেখানে সেখানে ইটভাটা স্থাপন করায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।’
টাঙ্গাইল জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরাও চাই অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হোক, সে কারণে আমরা সব ইটভাটা মালিকের সঙ্গে মিটিং করেছি। সেখানে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে সবাইকে বলা হয়েছে।’
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক বিপ্লব কুমার সূত্রধর বলেন, এ বছর আমরা অনেকগুলো ইটভাটাকে জরিমানা করেছি। আমাদের অভিযান চলবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। যেসব ইটভাটা বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে আছে সেগুলোর ছাড়পত্রও বাতিল করা হবে।
এসএন