টাঙ্গাইলে ‘ডুবের মেলা’ দেখতে মানুষের ঢল!
ব্রিটিশ শাসনামলে ভক্ত সাধুখ্যাত সন্ন্যাসী মাদব ঠাকুরের মূর্তি স্থাপন করে মনোবাসনা পূরণে গঙ্গাস্নান, পূজা-অর্চনার শুরু। তখন থেকেই মূলতঃ গঙ্গাস্নান, পূজা-অর্চনা চলে আসছে। পরে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আনন্দ-উৎসব হিসেবে উদযাপন করে আসছিল। ওই সময় থেকেই গঙ্গাস্নান (ডুবের মেলা) নামে পরিচিত লাভ করে।
‘ডুবের মেলা’র দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছরের মতো এবারও টাঙ্গাইলের বাসাইলে সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম উৎসব ‘ডুবের মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে বংশাই নদীর পূর্ব-উত্তর তীরে রাশড়া-সৈয়দামপুর গ্রামে দিনব্যাপী ‘ডুবের মেলা’র আয়োজন করা হয়। এসময় ‘ডুবের মেলা’ দেখতে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।
‘ডুবের মেলা’র শুরুতে ‘দেবতা’ মাদব ঠাকুরের মূর্তিতে প্রণাম করে গঙ্গাস্নানের মাধ্যমে পূজার কার্যক্রম শুরু করেন নানা বয়সীরা।
এ ছাড়া পাপ এবং শাপ মোচনে ভোরে মানত ও গঙ্গাস্নান পর্ব শেষ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন তারা।
এদিকে, ‘ডুবের মেলা’ কেন্দ্র করে বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার, বাশঁ-বেতের তৈজসপত্র, মাটির তৈরি খেলনা, পুতুল, ঘোড়া, ট্রাক গাড়ি, হাড়ি-পাতিল, মাছের দোকান, চিড়া-মুড়ি, দইসহ দোকানিরা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন- প্রত্যন্ত গ্রামে এতো লোকের সমাগম ঘটে এটা অবিশ্বাস্য। বেচাকেনাও ভালো।
মেলায় আসা রঞ্জিত পাল বলেন, “ছোট বেলা থেকেই এ মেলা দেখে আসছি। কয়েক বছর পর মেলায় আসলাম। সকালে স্নান করেছি। এখন মেলায় ঘুরছি। অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে। সকালে নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ স্নান করেছে।”
মেলায় আসা সন্ধ্যা রাণী বলেন, “আজ মাঘীপূর্ণিমা। এ মাঘীপূর্ণিমার মধ্যে ‘ডুবের মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় এসে গঙ্গাস্নান ও পূজা দিয়েছি। মাঘীপূর্ণিমায় উপোস আছি। কেউ যদি উপোস থাকে, গঙ্গাম্নান ও পূজা দিয়ে খেতে পারে।”
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন বলেন, “ডুবের মেলা’ আমার ইউনিয়নের সৈয়দামপুরে বংশাই নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। পূর্বপুরুষ থেকেই এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মাঘীপূর্ণিমায় ‘ডুবের মেলা’ করেন। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ মেলা দেখতে আসেন।”
ডুবের মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি জীবন মণ্ডল বলেন, “প্রায় দেড়শ বছর ধরে মাঘীপূর্ণিমায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আমি এ মেলায় ষাট বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। দূর-দূরান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের কয়েক হাজার লোকের সমাগমের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী মেলা চলে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় জমির আইল ধরে পায়ে হেঁটে এ মেলায় আসতে হয়েছে দশনার্থীদের।”
এমএসপি