কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি
কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ নওয়াব আলীর বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ, মার্কেটে দোকান বরাদ্দ থেকে শুরু করে ভুয়া বিল-ভাউচারে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
নওয়াব আলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ পেয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত কমিটি। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জেলা প্রশাসককে পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে তার মতামত দিতে বলা হয়। এরপর জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে তার মতামত না দেওয়ায় শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা তদন্ত করে কয়েক পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে অধিদপ্তরে। এরপর গত বছরের ২২ নভেম্বর বেসরকারি কলেজ শাখা-৩ এর সহকারী পরিচালক আবদুল কাদের কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বরাবর এক পৃষ্ঠার চিঠি পাঠিয়ে পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে মতামত চান।
কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সঙ্গে এ বিষয়ে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগের চিঠি ছিল এটি। এ বিষয় নিয়ে কার্যক্রম চলমান। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত টিম হয়েছিল। তারা প্রতিবেদন দিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা এখনই বলতে পারছি না।’
আবদুল কাদেরের সই করা চিঠি থেকে জানা গেছে, দুইজনকে শিক্ষক পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া নেন অধ্যক্ষ। পরে টাকা ফেরত ও অথবা চাকরি দেওয়ার কথা বলেন অধ্যক্ষ। বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন দুইজন শিক্ষক। এ বিষয়ে অনিয়মের বিষয়টির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে সংস্কার কাজে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। এ ছাড়া সভাপতির সই জাল করে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ, কলেজে মার্কেট নির্মাণ করে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অপ্রয়োজনীয় অর্থ আদায় করার মতো গুরুতর অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।
কলেজ শাখা-৩ এর সহকারী পরিচালক আবদুল কাদের বলেন, ‘অধ্যক্ষ নওয়াব আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের সত্যতা পেয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি চলমান রয়েছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
কলেজের উপাধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘তদন্ত কমিটি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম পেলেও এখনো তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। তার চাকরি আছে অল্প দিন। তিনি পিঠ বাঁচানোর জন্য ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে পড়ে আছেন। কলেজ ফান্ডের কোটি কোটি টাকা তিনি অনিয়মের মাধ্যমে খরচ করেছেন। ফান্ড শূন্য করে ফেলছেন। এত অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পরও কোনো খুঁটির জোরে তিনি চাকরিতে বহাল আছেন সেটা নিয়ে সবার প্রশ্ন?'
এদিকে অধিদপ্তরের বেসরকারি কলেজ শাখার উপপরিচালক এনামুল হক হাওলাদার বলেন, ‘কলেজ পরিচালনা পর্ষদ সভাপতির কাছে চিঠি পাঠিয়ে পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়েছিল। তিনি কোনো মতামত দেননি। গত সপ্তাহে আমরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে পত্র দিয়েছি। আশা করছি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ নওয়াব আলী বলেন, 'তদন্ত টিম এসেছিল। তবে তারা কী প্রতিবেদন দিয়েছে আমার জানা নেই।’
শহরের এনএস রোড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া কলেজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে গড়ে উঠেছে বহুতল মার্কেট। এ মার্কেট ঘিরে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষ হিসেবে অনিয়মের প্রমাণ ও জালিয়াতি করায় তার এমপিও বাতিল করা হয়েছে আগেই। এ ছাড়া তার সময়ে শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি কলেজে একটি ভবন নির্মাণকে ঘিরে সরকারি দরের বাইরেও অতিরিক্ত কয়েক কোটি টাকা কলেজ ফান্ড থেকে ঠিকারদার দেওয়া হয়েছে বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। ১২ কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ হলেও এখনো ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
এসএন