কুমিল্লায় র্যাবের হাতে ‘জিনের বাদশা’ আটক
প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতকারী রবিউল হোসেন ওরফে ‘জিনের বাদশা’ কে আটক করেছে র্যাব।
রবিবার দুপুরে র্যাব-১১ কুমিল্লা ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতারক রবিউল হোসেন চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানার মধ্যম সোনা পাহাড় বেদে পল্লীর মো. ইউনুস মিয়ার ছেলে।
র্যাব জানায়, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলা সদরের মোসাম্মৎ ইভা নামে এক নারীর কাছে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে কয়েকবার কল আসে। কলটি রিসিভ করলে অপর প্রান্ত থেকে এক যুবক জানায় তার নাম ‘জিনের বাদশা’ এবং তিনি সব সমস্যার সমাধান দিতে পারেন।
তার পরিবারে নানাবিধ সমস্যা আছে। সমস্যাগুলোর সমাধান কল্পে ‘জিনের বাদশা’র শরণাপন্ন হতে পারে। তবে তাকে কেউ দেখতে পারবে না। কারণ সে লোকালয়ে হাজির হয় না।
পরবর্তীতে রবিউল ভুক্তভোগীর অগোচরে তার এলাকায় গিয়ে পারিবারিক সমস্যা, স্বামী কী করে, কোথায় থাকে এবং বাড়ির পারিপার্শ্বিক অবস্থান জেনে বুঝতে পারে, এ নারীকে আয়ত্বে আনতে পারলে সে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা লাভবান হবে।
পরবর্তীতে আবারও ফোনে কল দিয়ে রবিউল ওই নারীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেন।
বিশ্বাস অর্জনের পর রবিউল সিলেটের জৈন্তাপুর নামক ঠিকানা (ভুয়া ঠিকানা) থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঁচটি তাবিজ পাঠান।
রবিউল জানায়, তার কাছে জিন আছে, সে ৪-৫টি জিন পালে এবং তার কাছে সবসময় জিন থাকে।
মোসাম্মৎ ইভার সৌদি প্রবাসী স্বামীর সমস্যার সমাধান করতে হলে জিনদের দিতে হবে ১ লাখ পাঞ্জাবি এবং ১ লাখ টুপি। না দিলে তার স্বামী ও সন্তান মারা যাবে বলে ভয় দেখান রবিউল।
রবিউল আরও বলেন, তাদের বাড়িতে বদজিনের নজর পড়েছে। বদজিন থেকে মুক্ত হতে হলে ভুক্তভোগীকে গরু, মহিষ, শুকর বলি দিতে হবে।
প্রতারক রবিউলের কথা সরল মনে বিশ্বাস করে মোসাম্মৎ ইভা তার স্বামীর শারীরিক সমস্যা সমাধান, সন্তানদের সুস্থ্যতার জন্য বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে রবিউলকে বিভিন্ন ধাপে ৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা দেন।
সর্বশেষ গত বছরের ১৬ নভেম্বর রবিউল আরও এক লাখ টাকা দিতে বলে। টাকা দিতে না পারলে তার স্বামী দেশের বাইরে মারা যাবে। এমন কথা বলে এক লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ করে।
টাকা পাঠানোর ২-৩ দিন পর মোসাম্মৎ ইভা স্বামী শারীরিকভাবে সুস্থ না হলে তিনি বার বার বিভিন্ন নম্বরে রবিউলকে ফোন দিয়ে সবগুলো নম্বর বন্ধ পায়। তখন বুঝতে পারেন যে, তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
তারপর ওই নারী বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিলেটের জৈন্তাপুর গিয়ে রবিউলের খুঁজে বের হন কিন্তু সেখানে এ নামের কাউকে না পেয়ে তারা পুনরায় ফেরত আসেন।
পরবর্তীতে মোসাম্মৎ ইভা এলাকার মানুষের কাছে জানতে পারেন র্যাবের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান পেতে পারেন। এরপর গত ২ ফেব্রুয়ারি র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লাতে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব-১১, সিপিসি-২। গোয়েন্দা তৎপরতা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ১২ জানুয়ারি বিকাল ৫টায় চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ‘জিনের বাদশা’ রবিউল হোসেনকে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে মো. রবিউল হোসেনের কাছ থেকে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। মূলতঃ সে বেদে সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ায় তাবিজ এবং ঝার-ফুকের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকার লোকের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। লোকদের কাছে নিজেকে বড় মাপের কবিরাজ এবং ৪-৫টি জিন পালন করে বলে দাবি করে। তার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবাসীদের সহজ-সরল স্ত্রী।
এমএসপি