হাইকোর্টের নির্দেশনার ৮ বছরেও অপসারণ হয়নি ইংরেজি সাইনবোর্ড
বাংলায় সাইনবোর্ড লেখার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশের ৮ বছরেও এ নির্দেশ মানা হচ্ছে না বরিশালে। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি সাইনবোর্ডের ব্যবহারই বেশি দেখা যাচ্ছে।
বাংলায় সাইনবোর্ড লেখার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে কোনো গুরুত্ব দেখা যায়নি। তবে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এ অবস্থায় ইংরেজি অক্ষরের সাইনবোর্ড অপসারণের জন্য বরিশাল সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশের সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বরপ্লেট, দপ্তরের নামফলক বাংলায় লেখার নির্দেশ দেন আদালত। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আদালত স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। ওই বছরেরই ২৯ মে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মাধ্যমে এটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই মধ্যে গাড়ির নম্বরপ্লেট ও দপ্তরের নামফলক বাংলায় পরিবর্তিত হয়েছে। সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এ ছাড়া প্রচলিত আইন ১৯৮৭-এর ৩ ধারায়ও সরকারি অফিস, আদালত, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর সদর রোড, চকবাজার, কাকলীরমোড়, বাংলাবাজার, নতুন বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মুঠোফোন কোম্পানি, ব্যাংক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইলেকট্রনিক্স দোকানসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে সাইনবোর্ড ইংরেজি অক্ষরে লেখা। তবে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষা থাকলেও, ইংরেজি লেখা সাইনবোর্ড অনেক বেশি। বরিশাল নগরীতে টপ টেন, প্লাস পয়েন্ট, ইজি ফ্যাশন হাউজের দুটি শো-রুম, দর্জিবাড়ি, ভারগো, বে, বাটা, অ্যাপেক্স, সনি র্যাংস, সিঙ্গার, ট্রান্সকমসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান এ নির্দেশনা মানছে না।
সদর রোডের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আজাদ হোসেন বলেন, ‘ইংরেজি অক্ষরে সাইনবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না এ বিষয়ে জানি না। তবে আদালতের নির্দেশনা আছে যেহেতু বাংলা অক্ষরের নতুন সাইনবোর্ড ব্যবহার করব।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগারে শিক্ষার্থী মোহনা আক্তার জানান, বরিশাল নগরীর নামি-দামি শোরুম, ব্যাংক, ব্যাংকের বুথগুলোতে বেশিরভাগ ইংরেজি অক্ষরের লেখা সাইনবোর্ড ব্যবহার করে। এ ছাড়া কিছু কোচিং সেন্টার আছে যেগুলো বড় বড় ইংরেজি অক্ষরে বিজ্ঞাপন ও সাইনবোর্ড ব্যবহার করে আসছে। এসব স্থানে বাংলার ব্যবহার নেই বললেই চলে।
মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ বলেন, ‘বাংলা ভাষার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে। চারপাশে ভাষার ব্যবহার দেখলেই আমরা তা বুঝতে পারি। আমাদের সমাজে ইংরেজি বলা এবং তার বিভিন্ন ব্যবহার বর্তমানে ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয়তো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা তাই ভাবছেন, ইংরেজি নাম ব্যবহার করে দোকান আধুনিক বানাবেন। আসলে এটি ভুল ধারণা তাদের। আইন প্রয়োগ করে এসব বন্ধ করা উচিত। বাংলা ভাষাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হবে।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুখ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। তবে কত সংখ্যক ব্যবসায়ী ইংরেজি অক্ষরের সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে তার নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বছরের চলতি মাসেই সিটি করপোরেশন ও বরিশাল জেলা প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগে নগরীতে অভিযান চালিয়ে এসব সাইবোর্ড অপসারণ করা হবে।’
তবে এর আগেও ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে একাধিক বার বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয়েছে বলে জানান বিসিসির নির্বাহী কর্মকর্তা।
এসএন