আদমদীঘিতে তিন পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ
বগুড়ার আদমদীঘিতে দুই বছর ধরে তিনটি পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের মাতবরের বাড়ির উঠানে গরু কোরবানি না করাসহ নানা অভিযোগে তিন পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে মাতবর আবু নঈম সরকার লিংকনের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আদমদীঘির ছাতিয়ানগ্রাম স্টেশনপাড়ার মাতবর আবু নঈম সরকার লিংকনের বাড়ির উঠানে গরু কোরবানি না করায় তিন পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গত মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত আভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ফেরদৌস হোসেন, মোজাফ্ফর হোসেন ও আব্দুস সামাদ খন্দকার। তবে অভিযুক্ত লিংকন এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। উল্টো তাদের নামে অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভুক্তভোগী পরিবারের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের স্টেশনপাড়া মহল্লার বাসিন্দারা প্রত্যেক বছর কোরবানি ঈদে সবার পশু আবু নঈম সরকার লিংকন মাতবরের উঠানে জবাই করতেন। কিন্তু তিন বছর আগে কোরবানির পশু নিজ বাড়ির উঠানে জবাই করেন আব্দুস সামাদ খন্দকার। এতে তার ওপর ক্ষিপ্ত হন লিংকন। পরবর্তী কোরবানি ঈদে মোজাফ্ফর হোসেন ও ফেরদৌস হোসেনও নিজ বাড়ির উঠানে কোরবানি করেন। এরপর লিংকন তার পক্ষের কয়েকজন মাতবরকে একত্রিত করে একটি বৈঠক বসান। সেখানে তিন পরিবারকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকে ওই তিন পরিবারের সদস্যদের মহল্লার কোনো দাওয়াতে নিমন্ত্রণ করতেন না। তাদের সঙ্গে সবাইকে মেলামেশা করতে বিরত থাকতে বলেন।
মোজাফ্ফরের ছেলে মোহাম্মদ বাবু বলেন, সমাজে থাকলে তার কথা মতো চলতে হবে বলে জানান লিংকন।
ভুক্তভোগী ফেরদৌস হোসেন বলেন, একঘরে করে রাখার পর কয়েক মাস আগে ওই মহল্লার সামাদের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত পর্যন্ত দিতে দেয়নি। গত ঈদে আমার কোরবানির মাংস সমাজে (মিসকিনের হক) জমা নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, সপ্তাহ খানেক আগে এক রাতে আবু নঈম লিংকনসহ কিছু মাতবর গ্রামে এক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় একঘরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেউ যদি মেলামেশা করে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত মাতবর আবু নঈম সরকার লিংকন বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা। আমরা এ এলাকায় অত্যন্ত সম্মানিত। বরং তারাই অসামাজিক। সমাজের সিদ্ধান্তের সঙ্গে কখনোই তারা একমত পোষণ করেন না। এজন্য সমাজের মানুষও তাদের পছন্দ করে না। তাদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আমিও ইউএনও অফিসে অভিযোগ করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সামাজ সেবা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে আমরা ব্যবস্থা নেব।
আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল এসপি) নাজরান রউফ বলেন, সমাজচ্যুত করা অত্যন্ত খারাপ কাজ। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএন