বগুড়ার চার গ্রাম জুড়ে শিয়াল আতঙ্ক
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চার গ্রামজুড়ে দেখা দিয়েছে শিয়াল আতঙ্ক। গত পাঁচ দিনে শিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়ে আহত হয়েছেন ওই চার গ্রামের কমপক্ষে ৩০ জন নারী-পুরুষ। শিয়ালের ভয়ে সন্ধ্যার আগেই গ্রামের নারী ও শিশুরা ঘরে ঢুকে পড়ছেন। আর পুরুষরাও বাইরে বের হলে হাতে লাঠি নিয়ে বের হচ্ছেন। আবার অনেকেই শিয়াল মারার জন্য লাঠি হাতে দলবদ্ধভাবে ঘুরাফেরা করছেন। ইতিমধ্যে গ্রামবাসী তিনটি শিয়াল পিটিয়ে মেরেছেন।
এদিকে গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতা ফিরিয়ে আনতে বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা গ্রাম পরিদর্শন করে লিফলেট বিতরণ করেছেন।
ফুলকোর্ট গ্রামের আবু তালেব বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি মসজিদে ওজু করছিলেন। এমন সময় একটি শিয়াল এসে তার ওপর আক্রমণ করে কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত করে।
রামপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যার পর সবজি ক্ষেতের মাচার নিচ থেকে হঠাৎ করে শিয়াল বের হয়ে আক্রমণ করে। রাতের পাশাপাশি দিনেও শিয়ালের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন গ্রামের মানুষ।
রামপুর গ্রামের নাজমা বেগম জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে একটি শিয়াল তার বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে আক্রমণ করে। এরপর থেকে গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নারী ও শিশুরা সন্ধ্যার আগেই ঘরে ঢুকে পড়ছে। পুরুষদের মধ্যে যারা সন্ধ্যার পর হাটবাজারে যাতায়াত করেন তারা লাঠি হাতে চলাফেরা করছেন। গ্রামের লোকজন শিয়াল মারার জন্য লাঠি হাতে দলবদ্ধভাবে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ফুলকোর্ট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, লোকজনের চোখে-মুখে শিয়াল-আতঙ্ক। বাজার করতে আসা লোকজনের হাতে বাঁশের লাঠি। তারা বলেন, শিয়ালগুলো কোনো গবাদিপশুর ওপর আক্রমণ করছে না, মানুষ দেখলেই তাদের ওপর আক্রমণ করছে। এ কারণেই লাঠি হাতে তাদের চলাফেরা।
বন বিভাগের ফরেস্টার আসরাফুল ইসলাম বলেন, বুধবার বন বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। লোকজনদের শিয়াল পিটিয়ে না মেরে সতর্কভাবে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইকবাল বলেন, ধারণা করা হচ্ছে শিয়াল জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে এমন আচরণ শুরু করেছে। খাদ্য সংকটের কারণে হলে তারা বিভিন্ন গবাদিপশুর ওপর আক্রমণ করত। শিয়ালের আক্রমণের শিকার লোকজনকে দ্রুত ভ্যাকসিন গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।
তবে বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, জলাতঙ্ক আক্রান্ত না, তবে তাদের মতে বন্যপ্রাণীদের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন জঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ার কারণে ছোট ছোট অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই প্রাণীগুলো শিকার করত শিয়াল। তিনি আরও বলেন, গ্রামের লোকজন যখন শিয়াল মারার চেষ্টা করছে, এতে ওই প্রাণী আরও ক্ষিপ্ত হয়ে লোকজনের ওপর আক্রমণ করছে।
টিটি/