শ্রীপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় ৩৭ বাড়ি ভাঙচুর, আহত ১
মাগুরার শ্রীপুরে সামাজিক দলাদলি ও সদ্যসমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে মেম্বার পদে জয়-পরাজয়কে কেন্দ্র করে দুই দফায় আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িসহ তার সমর্থকদের বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এক নারী আহত হন বলে জানা যায়। এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ৪ নম্বর শ্রীপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর-গোয়ালপাড়া ও সাহেবপাড়া নামের দুটি গ্রামে।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারী) বেলা ২টার দিকে এবং পরে বিকাল ৩টার দিকে সদ্য সমাপ্ত (২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত) ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত মেম্বার প্রার্থী মন্নু মন্ডল ও তার সহযোগী সিরাজ মন্ডলের সমর্থকরা এ হামলা চালায় বলে দাবি করেছেন শ্রীপুর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিয়ার রহমান।
সভাপতি বদিয়ার রহমান মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, বুধবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২টার দিকে সিরাজ মন্ডল এবং মন্নু মন্ডলের নেতৃত্বে তার লোকজন আমার সমর্থকদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করে। আমি থানায় ফোন করলে পুলিশ এসে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু এরপর আবার বেলা ৩টার দিকে পার্শ্ববর্তী তিন গ্রাম থেকে লোক এনে আমার সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর চালানো হয়। মোট ৩৫ থেকে ৩৭টি বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে মোরগ প্রতীক নিয়ে বিএনপি সমর্থক মন্নু মন্ডল পরাজিত হন। এখানে টিউব অয়েল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন আমার ভাতিজা শ্রীপুর ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান। এরপর থেকেই সিরাজ মন্ডল এবং মন্নু মন্ডল তাদের সমর্থকদের নিয়ে প্রায়ই আমার লোকজনকে মারধর করে আসছে। মঙ্গলবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) তারা আমার সমর্থক হাবিলকে বেদম মারধর করে।
আক্ষেপ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ৩৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ করছি। আমরা এলাকায় গন্ডগোল চাই না। অথচ বিএনপির লোকজন একজোট হয়ে আমাদের আওয়ামী লীগের লোকজনের বাড়িঘরই ভেঙ্গে দিল।
এদিকে এ ঘটনার জন্য শ্রীপুর উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ৪ নম্বর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মসিয়ার রহমানকে দায়ী করে তিনি বলেন, বিএনপির লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কারণেই আজকে এখানে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা নির্যাতিত হচ্ছে।
তবে এ অভিযোগ সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়েছেন শ্রীপুর উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ৪ নম্বর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান মসিয়ার রহমান।
তিনি বলেন, ঘটনাটি অন্য গ্রামের। সেখানে আমার কোনো লোকজন যাইনি। ওখানে বিএনপির লোকজনের সঙ্গে তাদের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রশ্নই আসে না। আর বদিয়ার রহমান মন্ডল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ না করে আনারস প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি এবং তার ভাই-ভাতিজারা সবাই আনারস প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার বেলা ১২টার দিকে বদিয়ার মন্ডলের প্রতিপক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন শ্রীপুর থেকে মোটরসাইকেলযোগে সাহেবপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে আসার পথে চর গোয়াল পাড়া কবরস্থান এলাকায় পৌঁছালে বদিয়ার মন্ডলের সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে আহত করে। আহত অবস্থায় তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে পরে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়।
আহত জাহাঙ্গীর হোসেন ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি একদেল শেখের ছেলে। মূলত তাঁকে কুপিয়ে জখম করার খবর জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যে মতে, ইরান বিশ্বাস, মাহবুব মন্ডল, হাবিব মণ্ডল, সুলতান বিশ্বাস, আমিরুল, আউয়াল, নবজেল, সোহেল, রুবেল, মাহমুদ বিশ্বাস, মহাবুব, রুবেল, উজির শেখ, আমিরুল শেখ, সাইদুল শেখ, আসাদুল শেখ, সুলতানের বাড়িসহ ৩৭টি বাড়িতে কম-বেশি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় সেকেন্দার মণ্ডলের স্ত্রী রোকেয়া বেগম ছাড়া তেমন কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে মতামত জানতে অভিযুক্ত মন্নু মন্ডল ও সিরাজ মন্ডলের সঙ্গে কথা বললে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন মাগুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) কামরুল হাসান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অফিসিয়াল কোনো কমেন্ট করতে পারছি না। তবে মাগুরা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে এখানে মোতায়েন করা হয়েছে।
অবি/এসআইএইচ