২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ-২০২৫) শুরু হচ্ছে আজ বুধবার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সকাল ১০টায় এ মেলার উদ্বোধন করবেন। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এই মেলা হতে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ মেলার যৌথ আয়োজক। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি ৭ দেশের ১১ প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নেবে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় যাত্রী পরিবহণে বিশেষ ছাড় দিতে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও অ্যাপভিত্তিক সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান উবারের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। পরে বাণিজ্য উপদেষ্টা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রবেশের ই-টিকেটিং অ্যাপের উদ্বোধন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রথমবারের মতো অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল ও প্যাভিলিয়ন স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস।
মেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে তৈরি করা হয়েছে ‘জুলাই চত্বর’ ও ‘ছত্রিশ চত্বর’। এছাড়া দেশের তরুণ সমাজকে রফতানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধ করতে তৈরি করা হয়েছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন।
মেলায় সম্ভাবনাময় সেক্টর ও পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে থাকছে স্বতন্ত্র সোর্সিং কর্নার, ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। বয়সভিত্তিক দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তি কর্নার, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় থাকছে শিশু পার্ক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চতুর্থবারের মতো বাণিজ্য মেলা পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
মেলার লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬১টি প্যাভিলিয়ন, স্টল, রেস্টুরেন্ট দেশীয় উৎপাদক-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে শতভাগ স্বচ্ছতায় বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ সামগ্রী, চামড়া ও আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল, টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রয় হবে।
বাংলাদেশ ব্যতীত সাতটি দেশের মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া।
এক্সিবিশন সেন্টারের দক্ষিণ-পূর্ব পার্শ্বে জুলাই চত্বর, দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে কালচারাল সেন্টার, টেকনোলজি কর্নার, রিক্রিয়েশন কর্নার এবং সেন্টারের উত্তর-পূর্ব (৬ একর) পার্শ্বে শিশু পার্ক ও উত্তর-পশ্চিম পার্শ্বে ছত্রিশ চত্বর ও নামাজ ঘর স্থাপন করা হয়েছে।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। প্রাঙ্গণের বাইরে ও নিয়মিত টহল দল থাকবে। নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেইট, পার্কিং এরিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সকল এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে।
এবারের মেলায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে। এক্সিবিশন হলে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আলাদা টয়লেটের পাশাপাশি এক্সিবিশন হলের বাইরেও পর্যাপ্ত সংখ্যক টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেলায় খাদ্য দ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ গঠিত টিম মেলা চলাকালীন প্রতিদিন ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে।
মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও পেশেন্ট কেয়ার এটেনডেন্ট উপস্থিত থেকে ফ্রি প্রাথমিক চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত কার পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে। পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিং সুবিধা সংবলিত দ্বিতল কার পার্কিং বিল্ডিং ছাড়াও এক্সিবিশন হলের বাইরে ছয় একর জমিতে পার্কিং এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মেলার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম ও দর্শনার্থীদের সকল প্রকার তথ্য প্রদানের জন্য একটি তথ্য কেন্দ্র। ব্যাংকিং সার্ভিসের জন্য থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক ব্যাংক বুথ। মা ও শিশুদের জন্য থাকবে মা ও শিশু কেন্দ্র। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক ও শোভন চেয়ার, বেঞ্চ, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাসব্যাপী এ বাণিজ্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা হতে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে (সাপ্তাহিক ছুটির দিন রাত ১০টা পর্যন্ত)।