গ্রিস-তুরস্ক সীমান্তে নিখোঁজ সুনামগঞ্জের ৩ যুবক, উৎকণ্ঠায় পরিবার
বিদেশে ভালো বেতনে কাজের আশায় যেকোনো উপায়েই হোক স্বপ্নের দেশ গ্রিস যেতে চেয়েছিলে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ৩ যুবক। এর জন্য উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের টুকদিরাই গ্রামের হাজি আব্দুল ওয়াহেদ মিয়ার ছেলে এনামুল হকের সঙ্গে কথা হয়ে সাড়ে ৩১ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। এর মধ্যে অভিভাবকরা চুক্তির টাকা দিয়েছেন এনামুলকে। কিন্তু এরই মধ্যে তুরস্কে একটি ঘরে থাকার হওয়ার পর গাড়ি ও পায়ে হেঁটে গ্রিস যাওয়ার পথে গত কয়েক দিন ধরে তাদের কোনো খোঁজ নেই। এ নিয়ে পরিবারের লোকেরা অজানা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
নিখোঁজ তিন যুবক হলেন- সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের সাকিতপুর গ্রামের ফুল মিয়া সর্দারের ছেলে জনু সর্দার (৩৪), একই ইউনিয়নের নতুন কর্ণগাঁও গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জুনেদ আহমদ (২২) এবং শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের আশুতোষ রায়ের ছেলে আকাশ রায় (২৫)। তবে আকাশ রায় দিরাই উপজেলার কল্যাণী গ্রামে বসবাস করেন।
পরিবার সূত্র জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা থেকে বিমানযোগে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় দুবাইয়ের একটি শহরে। যেখান থেকে তাদের প্রথমে ইরান, তুরস্ক নিয়ে যায় টুক দিরাই গ্রামের বাসিন্দা আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী (দালাল) চক্রের সদস্য এনামুল হক সর্বশেষ তাদের দ্রুত গ্রিস নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানায় এনামুল। ৩১ জানুয়ারি রাতের দিকে নিখোঁজ যুবকদের সাথে শেষ কথা হয় পরিবারের। এতে পরিবার-পরিজনদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও শঙ্কা কাজ করছে। তারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর পেয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার তুরস্ক-গ্রিস সীমান্ত থেকে ১২জন অভিবাসন প্রত্যাশীর লাশ উদ্ধার করে তুরস্কের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। দেশটির এর্ডিনা প্রদেশের ইপসালা গ্রামে ঠান্ডায় জমে পড়েছিল লাশগুলো। ২২ জনের অভিবাসন প্রত্যাশীর একটি দল গ্রিসের সীমান্ত পেরিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছিল। পরিবারের দাবি ওই ২২ জনের দলটিতে ছিলেন তারাও । তবে এখন পর্যন্ত সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের মৃত্যু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
নিখোঁজ যুবক জনি সর্দারের বাবা ফুল মিয়া সর্দার জানান, আমার ছেলে গ্রিসে পাঠানোর জন্য টুক দিরাই গ্রামের এনামুল হকের সাথে চুক্তি হয়। আমি চুক্তির সম্পুর্ণ টাকা দিয়েছি সর্বশেয় জানুয়ারির ৩১ তারিখ আমার ছেলের সাথে কথা হয়। কিছু পত্রিকায় আমার ছেলের মৃত্যু সংবাদ ছাপা হয়েছে। তবে আমি এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।
নিখোঁজ যুবক জুনেদ আহমদের বাবা লাল মিয়া বলেন, আমার ছেলেকে সাড়ে ১০ লাখ টাকায় গ্রিস নিয়ে যাবে বলে কথা হয়েছিল পাশের এলাকার ইনামুল হকের সাথে। তুরস্ক থেকে এনামুলের লোকজন গাড়িতে করে গ্রিসে পৌঁছে দিবে জানিয়ে আমার ছেলে এনামুলকে টাকা দিয়ে দিতে বলে। ওইদিনই দিরাই বাজারে বসে আমার ছেলে জুনেদকে তুরস্ক থেকে গ্রিসে পৌঁছে দেয়া বাবদ সর্বশেষ চুক্তির টাকা দেই এনামুলের ভাগ্নে শাহজাহানের হাতে তুলে। তারপর থেকে আমার ছেলের সাথে আর কোন যোগাযোগ নাই। আমার দুশ্চিন্তায় আছি।
নিখোঁজ আকাশ রায়ের মামা বিধান রায় বলেন, জানুয়ারির ৩১ তারিখেরর পর থেকে আমার ভাগ্নের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবি গুলো দেখা গেছে সেখানে আমার ভাগ্নের ছবি নেই।
এনামুল (দালাল) জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় সবাই মরেনি। কিছু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে। আমার ভাগ্নে হয়তো সেখানে থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত সঠিক কোনো খবর পাইনি।
এম/এমএসপি