নোনা গোলের মিঠা গুড়
নোনা গোলের মিঠা গুড়! গোল গাছ থেকে গুড়! সুন্দরবনের গোল গাছ ঘরের চাল তৈরিতেই ব্যবহৃত হতো এতকাল। এখন এই গোল গাছ থেকে তৈরি হচ্ছে গুড়। শুনতে একটু অবাক লাগছে? আরও একটু অবাক করার বিষয় হচ্ছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ গুড় রপ্তানি হচ্ছে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও।
গুড় বানাতে এখন গোলের চাষ হচ্ছে ওই অঞ্চলে। ওই অঞ্চলের গোল চাষিরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চাইছেন গুড় বিদেশে রপ্তানির জন্য। গোলের গুড় বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশা করছেন তারা।
বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেষা উপকূলীয় বরগুনার তালতলী উপজেলার বেহেলা গ্রামের চামেলী বেগম। চামেলী বেগম একজন গৃহিণী হলেও প্রত্যেক শীত মৌসুমে তিনি একজন নারী গোল গাছি। গোল পাতার গাছ চাষ করে তিনি এবং তার পরিবার সফল হয়েছেন। নোনা স্বাদের গোলের রস থেকে তৈরি করা মিষ্টি গুড়ে ভাগ্য বদলে গেছে তাদের পরিবারের।
চামেলী বেগম বলেন, শীত মৌসুমে যে গোলের রস পাই তাতে ধান চাষের চেয়ে গোলের রস ও গুড়ে আয় বেশি। ৩৩ শতাশং জমিতে যে ধান চাষ হয় তার আয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয় গোলের গুড়ে। এজন্য ধান চাষ রেখে গোল চাষে আগ্রহী হয়েছি। গোল চাষ করে আগের থেকে আমাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। তাই শীত এলে নাওয়া-খাওয়ারও সময় মেলেনা, দিনরাত গোলের রস ও গুড় বানানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়।
শুধু চামেলী বেগমই নয়, শীত মৌসুমের শুরুতেই গোল গাছিদের কর্মযজ্ঞে বদলে যায় তালতলীর বেহেলা গ্রামের চিত্র। ভোর রাত থেকে সংগ্রহ শুরু হয় গোল রস। এরপর সংগৃহীত সেই নোনা রস থেকে শুরু হয় গুড় তৈরির কাজ।
বেহেলা গ্রামের দীলিপ কুমার, আফজাল মিয়া, লাল চন্দ্র, শাহ আলম মল্লিকসহ একাধিক গোল চাষির সাথে কথা হলে তারা জানান, শীত মৌসুমের প্রায় ৪ মাস কর্মসংস্থান হয় ২ হাজার গাছির। প্রতিটি গোল গাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩/৪ কলসি রস পাওয়া যায়। প্রতি কলসি রস জ্বাল দিয়ে প্রায় ৪ কেজি গুড় পাওয়া যায়। যা বিক্রি করে মৌসুমে দিনে দুই তিন হাজার টাকা আয় করা যায়। কথা হয় একই উপজেলার গেন্ডামারা গ্রামের গোল চাষি সোবহান মুন্সি, আবদুল লতিফ ও বিমন চন্দ্রের সাথে। তারা বলেন, গোল পাতার গাছ চাষ করে গাছ থেকে যেমন রস পাওয়া যায় তেমনি ভাবে গোল গাছের পাতাও বিক্রি করা যায়। আবার গোলের পরিত্যক্ত ডগা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়, বিক্রিও করা হয়। সব মিলিয়ে গোল চাষ বেশ লাভজনক।
তালতলী উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে গোল গাছের আবাদ হচ্ছে। এতে অন্তত ২০ হাজার গোলগাছ রয়েছে। যা থেকে বছরে অন্তত ১০ হাজার কেজি গুড় উৎপাদিত হয়। এখানে গোল চাষের সঙ্গে এক থেকে দেড় হাজার কৃষক জড়িত।
উপজেলায় সবচেয়ে বেশি গোল গাছ আছে বেহেলা গ্রামে। এ গ্রামটিতে গোল গাছের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এরপরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গোল গাছ রয়েছে গেন্ডামারা গ্রামে। এটিসহ উপজেলার অন্যান্য কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে রয়েছে হাজার পাঁচেক গোল গাছ।
তালতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, গোলের গুড়ের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে গবেষনার মাধ্যমে চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং ভালো ভাবে গুড় তৈরি করে প্যাকেজিং করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলে চাষিরা আরো বেশি লাভবান হবে। এক্ষেত্রে সরকারি ভাবে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে খুব দ্রুত কৃষি মন্ত্রনালয়ে আমার দপ্তর থেকে প্রস্তাব পাঠানো হবে।
কেএফ/