দায়িত্ব নেওয়ার ১ মাসের মাথায় চেয়ারম্যানের প্রতি মেম্বারদের অনাস্থা
বিধি মোতাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত না করে বিএনপি সমর্থিত মেম্বারকে প্যানেল চেয়ারম্যান মনোনিত করায় নৌকা প্রতীকে বিজয়ী চেয়ারম্যানের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যরা।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের ওপর এমন অনাস্থা এনেছেন ইউপি সদস্যরা।
সদস্যদের করা লিখিত অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, বিধি মোতাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত না করে একক সিদ্ধান্তে জামায়াত, বিএনপি-পন্থি ইউপি সদস্যকে প্যানেল চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই হঠাৎ মিটিং ডেকে জানানো হয়, নতুন প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছে। সদস্যরা আপত্তি জানালে তাদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়ান চেয়ারম্যান।
চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে তারা বিরোধিতা করবেন তাদের জন্য পরিষদের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।
এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন সদস্যরা।
অনিয়মের মাধ্যমে গঠিত প্যানেল চেয়ারম্যান বাতিল চেয়ে ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য কাজী পিয়ারা বেগম, ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান, ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য রজ্জব আলী, ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুর রশিদ, ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. ওয়াজ উদ্দিন, ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আলম বেপারী, ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মুক্তার আলী উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগে সমর্থন জানিয়ে স্বাক্ষর করেন।
এ বিষয়ে সংরক্ষিত নারী সদস্য (১, ২, ৩) পিয়ারা বেগম বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে কোনো সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ না করে নিজের অবস্থানকে শক্ত করতেই এমনটা করেছেন চেয়ারম্যান। প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে আমাকে পাঁচ লাখ টাকার উৎকোচ দিতে বলে আমি অস্বীকৃতি জানালে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে মনোনিত করা হয়।
পরিষদের কোনো সদস্যকে তিনি এ বিষয়ে অবহিত করেননি। আমরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’ সিদ্ধান্ত না মানলে পরিষদে কাজ করতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি-ধামকি দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আব্দুল জলিল আওয়ামী লীগ ঘরোনার না হয়েও নৌকা প্রতীক পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান নির্বাচন করার জন্য বিদেশ থেকে এসেছেন। তিনি সুইজারল্যান্ডের স্থায়ী বাসিন্দা। ওই দেশে তার মদের ব্যবসা আছে। নির্বাচন শেষ করে ১০ দিনের মাথায় তিনি সুইজারল্যান্ড চলে গেছেন। পরিষদে সচিবের কাছে দুই মাসের ছুটি ধরিয়ে দিয়ে গেছেন।
৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আলম ব্যাপারী বলেন, ‘আমি তিনবারের নির্বাচিত সদস্য। প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে আমাদের সমর্থন নেয়নি চেয়ারম্যান। সভায় আমরা আরজি জানালে চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে অসদ আচরণ করেছে। আমাদের কোনো মূল্যায়নই করেন না তিনি। আমরা চাই, সমন্বয় করে কাজ করতে, যাতে ভোটাররা নাগরিক সব সেবা সহজভাবে পায়। চেয়ারম্যানের এমন আচরণ আমাদের ব্যাথিত করেছে।’
নব-নির্বাচিত প্যানেল চেয়ারম্যান শেখ পান্নু মিয়া বলেন, ‘আমি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়েছি। আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য কতিপয় লোক উঠে-পড়ে লেগেছে। অসত্য কথা প্রচার করছে।’
পরিষদের সচিব মোহাম্মদ আজম শিকদার বলেন, ‘চেয়ারম্যান সপ্তাহখানেক আগে দুই মাসের ছুটির একটি পত্র জমা দিয়ে বিদেশ চলে গেছেন।’
চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল দেশে না থাকার কারণে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সদস্যদের কাছ থেকে একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। এ ঘটনায় এক কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তদন্তে চেয়ারম্যান অভিযুক্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
/এমএসপি