নওগাঁয় পানির নিচে ২৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমির আলু
টানা ১৪ দিন ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের পর দুই দিন থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয় উত্তরের জেলা নওগাঁতে। থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে আলু চাষীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অন্যদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানিয়েছে, মাঘের বৃষ্টিতে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। এই বৃষ্টি ধান ও গমের জন্য আর্শীবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে আলুর ক্ষেতের ক্ষতি হতে পারে যদি আরও ৩/৪দিন বৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টিতে জেলায় আবাদি আলুর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। আর কিছুদিন পরেই আলু তোলার সময় হবে। এরই মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে আলুর জমির তলায় পানি জমেছে। এই অবস্থায় যদি ৩/৪ দিন বৃষ্টি হয় তাহলে আলুর ক্ষেতে পচন ধরে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলুর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫০ হেক্টর। কিন্তু হটাৎ করে মাঘের এই বৃষ্টিতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন আলু চাষিরা।
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের আলু চাষি আব্দুস ছালাম বলেন, ‘হঠাৎ মাঘের বৃষ্টিতে আলুর জমিতে পানি জমেছে। জমে থাকা পানিগুলো সেচ দেওয়া হচ্ছে। তবে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছেই। আমি ৩ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। আরও ৩/৪ দিন যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হবে। আর ফলনও কম হবে। শুনলাম রবিবার পর্যন্ত নাকি থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। সব মিলে খুব চিন্তা হচ্ছে এখন। এমনটা হলে লোকশানে পড়তে হবে।’
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের আলু চাষি লতিফুর রহমান বলেন, ‘আমি সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছি। চলতি মাসের শেষের দিকে ক্ষেত থেকে আলুগুলো উঠাবো। কিন্তু থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। চেষ্টা করছি ক্ষেত থেকে বৃষ্টির পানি সরাতে কিন্তু বৃষ্টি তো একবারে থামছেই না। যদি আরও ৩ থেকে ৪ দিন বৃষ্টি হয় তাহলে ক্ষেতে পানি আরও জমে যাবে আলুর ক্ষেতে পচন ধরতে পারে। ফলন কমে যেতে পারে। এমন অবস্থায় খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি নওগাঁর উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এই বৃষ্টিতে ফসলের কোন ক্ষতি হবে না। ধান-গম ও ভুট্টার জন্য আর্শীবাদ হয়েছে এই বৃষ্টি। তবে যদি একটানা ৩/৪ দিন বৃষ্টি হয় তাহলে আলু ক্ষেতের ক্ষতি হতে পারে। ফলন বিপর্যয় হতে পারে। কারণ টানা বৃষ্টিতে ইতিমধ্যে আলুর ক্ষেতে পানি জমে গেছে। অনেক আলু চাষি ক্ষেত থেকে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু যদি আরও ২/৩দিন ধরে বৃষ্টি হয় তবে ক্ষেতে পানি আরও জমে যাবে। যার কারণে আলুর ক্ষেতে পচন ধরতে পারে। তাহলে আশানুরুপ ফলনের বিপর্যয় হতে পারে। এতে করে লোকশানের মুখে পড়তে পারে চাষিরাও।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন অবস্থায় আলুগুলো তুলেও কোনো লাভ হবে না। তুলে রেখে দিলেও সেগুলো পচে যেতে পারে। বৃষ্টি কমার পর অবস্থা অনুযায়ী ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া নাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিসাররা চাষিদের সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন।’
নওগাঁর বদলগাছীর স্থানীয় কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’
এসআর/এসআইএইচ