টাঙ্গাইলে স্থগিত কেন্দ্রের ভোট নিয়ে শঙ্কায় প্রার্থী-ভোটাররা
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে জোরপূর্বক ভোট দেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় স্থগিত রয়েছে ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এখন উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের আকালু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দিকে নজর রাখছেন উপজেলাবাসী।
এ কেন্দ্রে আবারও ৭ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিস। অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও সাধারণ ভোটাররা।
উপজেলার অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়াম্যান পদে তিনজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত রফিকুল ইসলাম রফিক (নৌকা), বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র শরিফুল ইসলাম সরকার শরিফ (আনারস) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান রহিজ উদ্দিন আকন্দ (মোটরসাইকেল)। এ কেন্দ্রে মোট ৩ হাজার ৩২ ভোটার রয়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের ওই কেন্দ্রের আওতাধীন আকালু, বিল আমুলা, আমুলা, দহভরাট ও মাছুয়াহাটা গ্রামের সাধারণ ভোটাররা শঙ্কার কথা জানান।
ভোটাররা বলছে, গত ২৬ তারিখে নির্বাচনের দিন সকালে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার কর্মী-সমর্থক ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মোটরসাইকেলের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে মারামারি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার রেশ এখনও রয়ে গেছে।
'আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিনও বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রার্থীরা একে অপরের কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসছেন। নির্বাচনের দিন ভোট নিয়ে ব্যাপক শঙ্কায় রয়েছি।'
'এ ছাড়া সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারব কি না তারও নিশ্চিয়তা পাচ্ছি না। তাই আমরা সাধারণ ভোটাররা মনে করছি নির্বাচনের ক’দিন আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন।'
বিএনপি থেকে (স্বতন্ত্র) আনারস প্রতীকের শরিফুল ইসলাম (সরকার শহীদ) জানান, কয়েকদিন আগেও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রার্থনা করেছি। কিন্তু সোমবার থেকে আমার কর্মী-সমর্থকদের ভোট চাইতে দিচ্ছে না ও এলাকাতেও ঢুকতে দিচ্ছে না নৌকার কর্মী-সমর্থকরা। এ নিয়ে মঙ্গলবার নির্বাচন অফিসার বরাবর অভিযোগ জমা দিয়েছি।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও মোটরসাইকেল প্রতীকের মো. রহিজ উদ্দিন আকন্দ জানান, প্রচারণার কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে নৌকা প্রার্থী বহিরাগত লোকজন এলাকায় প্রবেশ করিয়েছে। যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা করছি।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী (নৌকা) প্রতীকের রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম জানান, ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর অভিযোগ সঠিক না। তাদের প্রচারণায় বাধা দেওয়া অসম্ভব বলেও জানান তিনি।
রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমা সুলতানা জানান, স্থগিত হওয়া আকালু কেন্দ্রে পুনরায় ভোট ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। শুধু একজন প্রার্থী একটি অভিযোগ দিয়েছে, সেটা ভূঞাপুর থানায় ফরওয়ার্ড করা হয়েছে।
গত ২৬ ডিসেম্বর উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে অলোয়া ইউনিয়নের আকালু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জোরপূর্বক ভোট প্রদানকে কেন্দ্র করে নৌকা ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন।
অলোয়ায় ১০টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলের মধ্যে ৯টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমা সুলতানা। এরমধ্যে নৌকা ৪ হাজার ৮৫৫ ভোট, আনারস ৬ হাজার ৯ ভোট ও মোটরসাইকেল ৪ হাজার ৫২৭ ভোট পেয়েছেন। ৯টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে নৌকার চেয়ে ১ হাজার ১৫৪ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীক।
টিটি/