ঢাকাসহ সারাদেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ সমর্থনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
‘মার্চ ফর জাস্টিস’ এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আদালত চত্বরে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ, চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া, চাঁদপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর, রাজশাহী, হবিগঞ্জ, নোয়াখালীতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ সমর্থনে শিক্ষার্থীদের এ পর্যন্ত বিক্ষোভের কথা জানা গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যা।
জানা যায়, কোটা সংস্কার ও পরবর্তী সহিংসতায় ৯ দফা বাস্তবায়নের জন্য হাইকোর্টের সামনে আন্দোলন করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় হাইকোর্টের প্রধান গেট ও আন্দোলনকারীদের পুলিশ-বিজিবি বাহিনী ঘিরে রাখে।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে হাইকোর্টের সামনে ছাত্রসহ সচেতন নাগরিক সমাজ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে স্লোগান দেন।
এ সময় আন্দোলনকারীরা, বিজিবি বর্ডারে ফিরে যাও, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না স্লোগান দেন।
আজ সারাদেশের পালিত হচ্ছে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি। গতকাল এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর অংশ হিসেবে আজ রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে দুপুরে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনের অংশ হিসেবে সমন্বয়কদের ডাকা আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আদালত চত্বরে প্রবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুম এবং খুনের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ ও বিজিবির ব্যারিকেড ভেঙে চট্টগ্রাম আদালতে প্রবেশ করেন বিক্ষুব্ধরা।
আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দেয় আইনজীবীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিতে দোয়েল চত্বর এলাকায় স্লোগান দেন থাকেন আন্দোলনকারী।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা সেখানে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করেছে তুলেছে। শত শত শিক্ষার্থী বিক্ষোভ যোগ দিয়েছেন। আজ বুধবার সকাল ১১টা থেকে তারা সেখানে অবস্থান নেন।
জানা গেছে , বেলা ১১টায় প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী জড়ো হন। পরে সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর আরও শিক্ষার্থী যোগ দিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে। তখন পুলিশ ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে যায়। বর্তমানে ২০০-৩০০ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে আছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বগুড়ায় বিক্ষোভ করেছে। দুপুরের শহরের জলেশ্বরীতলার আদালত চত্বরে সামনে বিক্ষোভ করে ছাত্র-ছাত্রীরা। মিছিল নিয়ে তারা আদালত চত্বরে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে তারা শহরের খেলার মাঠ ও জলেশরীতলা সড়কে বিক্ষেভ করেছে।
এ সময় তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কের মুক্তি এবং আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় বিচার দাবি করেন।
এদিকে, শহরের সাতমাথাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনের অংশ হিসেবে সমন্বয়কদের একাংশের আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে চাঁদপুর জেলা জজ আদালত ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় এলাকায় প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় সম্মুখে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের উত্তর পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
বিক্ষোভের শুরুতে শিক্ষার্থীরা জেলা জজ আদালতের সম্মুখে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয় এবং তাদেরকে সরিয়ে সড়কের একপাশে নিয়ে আসে। সেখানে মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়।
দিনাজপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-ছাত্রীরা। বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের ব্যানারে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সাথে যোগ দেয় তাদের অভিভাবকরাও। ছাত্র-ছাত্রীরা শ্লোগান দেয়া শুরু করলে সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। বাকিদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়।
কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের হয়রানি, আটককৃতদের মুক্তি ও আন্দোলনে শিক্ষার্থী নিহতের বিচার দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা স্কুলের সামনের সড়কে কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করে।
এরআগে কোটাবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে ও ছাত্র-জনতা গণহত্যার বিচারের দাবিতে চৌরাস্তা সমবায় মার্কেটের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ময়মনসিংহেও মার্চ ফর জাস্টিস র্কমসূচি পালন করছেে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। সকাল সোয়া ১১টার দিকে শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় চিফ জুডিশিয়িাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে জড়ো হয় তারা। সেখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ করে তারা। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি টাউনহল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা।
টাঙ্গাইলে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা জেলা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণের পাশে হেলিপ্যাড এলাকায় ‘মার্চ ফর জাস্টিs’ কর্মসূচি পালন করেছে। এ সময় তারা পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে কোর্ট এরিয়া এবং শহরের বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল করেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) জিয়াউল ইসলাম চৌধুরীর নিকট তাদের দাবি-দাওয়া জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বরিশালে 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে চার সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আজ বুধবার সকাল ১১টার দিকে শহরের সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে ও জজ কোর্টের সামনে ফজলুল হক এভিনিউতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কমপক্ষে ১০ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে এদিন সকাল ১১টার পর কাঠপট্টি সড়কের মুখে মিছিল করার চেষ্টা করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন অভিভাবকও ছিলেন। তবে কর্মসূচির শুরুতেই বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের বাদানুবাদ হয়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
এক পর্যায়ে পুলিশ সিটি কলেজের গলির মুখে শিক্ষার্থীদের আটকে রাখে। পরে কয়েকশ আন্দোলনকারী সদর রোডে অবস্থান নিলে পুলিশ শুরুতে তাদের ধাওয়া দেয় ও পরে লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় ৪ সাংবাদিকসহ অনেকে আহত হন।
৯ দফা দাবি আদায়ে নোয়াখালীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা শহর মাইজদী বাজার এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে।
মিছিলটি নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক, জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ, শিল্পকলা একাডেমিক, চিকিৎসা সহকারী প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় সড়ক, নোয়াখালী প্রেসক্লাব ও জেলা জজকোর্ট সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জজকোর্টের সামনে এক সমাবেশ করেন।