২১ বছর ধরে ভ্যানে ফল বেচে সংসার চালাচ্ছেন দুলাল
মোহাম্মদ দুলাল (৫৬) একজন ফল ব্যবসায়ী। পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি ফল বিক্রি করছেন। তবে ফল বিক্রির জন্য তার স্থায়ী কোনো গদি নেই। ভ্যানে ফল নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে করেন বিক্রি। দিনের বেলা চাহিদা কম এবং পুলিশি বাঁধা থাকায় রাতে ফল বিক্রি করেন দুলাল। ফল বিক্রি করে যে আয় হয় তাতে সচ্ছলভাবে চলে ছয় সদস্যের সংসার। দুলালের বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বাশকান্দি গ্রামে। ঘাট থেকে তার বাড়ির দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার।
জরুরি সমস্যায় না পড়লে ফল বিক্রির জন্য ঘাটে আসা বাদ পরেনি তার। ঘাট এলাকার চায়ের দোকান থেকে ফেরির মাস্টার পর্যন্ত সবার কাছেই তিনি সমান পরিচিত। কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে গল্প জমান পরিচিত জনদের সঙ্গে।
ভ্যানের ওপর ডালা বানিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে রকমারি ফল। ভ্যানের সঙ্গে ব্যাটারি যোগ করে সংযোগ দেওয়া হয়েছে লাইটের, সারারাত আলো দেয় এই লাইট। সাদা এই আলোতে দূর থেকেই ফলগুলো জলজল করতে থাকে। এতে করে ক্রেতার আকর্ষণ বাড়ে।
বিক্রির এই ফল সংগ্রহ করতে তাকে যেতে হয় রাজধানীর সদরঘাট এলাকায়। খাঁচি ধরে কেনা হয় আপেল, কমলা, মাল্টা, বেদেনাসহ মৌসুমি ফল। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার মুকাম করেন তিনি। মুকামের মালামাল এনে নিজ বাড়িতে সংরক্ষণে রেখে চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন বিক্রির জন্য ভ্যানে তুলে ঘাটে আসেন।
ফলের দোকানগুলোতে সময় বাঁচাতে অন্যসব ফল বিক্রেতা যখন ডিজিটাল নিক্তি ব্যবহার করেন তখন স্বল্প শিক্ষিত দুলাল ফল পরিমাপে দাড়ি পাল্লা ব্যবহার করেন। তার ব্যবহারের দাড়িপাল্লাটির বয়সও দুই দশক পেরিয়েছে।
পাটুরিয়া ঘাটে ফলের বাজার খুবই প্রসিদ্ধ। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার লোকজন এই ঘাট ব্যবহার করে যাতায়াত করে। ফেরি স্বল্পতা, নাব্যতা সংকট ও ঘণ কুয়াশায় এই ঘাটে প্রায়ই ফেরি পারাপার ব্যহত হয়। বিশেষ দিনগুলোতে যানবাহনের চাপ তুলনামূলক হারে বাড়ে। রাজধানী থেকে ছেড়ে আসা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা সবাই জানে ঘাটে জ্যামে আটকে থাকতে হবে। বাড়ির জন্য ফল-ফলাদি কেনার কথা মাথায় আসলেই প্রথমে মনে পরে পাটুরিয়া ঘাটের কথা। জ্যামে আটকে থাকা সময়টুকু এভাবেই কাজে লাগান যাত্রীরা। ন্যায্যমূল্য এবং সময় বাঁচাতেই পাটুরিয়া ঘাটের এই ভ্রাম্যমান ফলের দোকানগুলো প্রসিদ্ধ হয়েছে।
দুলালের মতো আরও শ খানেক ভ্রাম্যমাণ ফলের ভ্যান রয়েছে ঘাট এলাকায়। অনেকে দিনে আবার অনেকে রাতে এই ফল বিক্রি করেন। রাতে দুরপাল্লা পরিবহনের চাপ থাকায় দিনের চেয়ে রাতে বিক্রি বেশি সেজন্য বেশিরভাগ বিক্রেতারিই রাতে ফল বিক্রিতে আগ্রহ।
জানাগেছে, ঘাটে পরিবহনের চাপ পড়লে বিক্রি বাড়ে। গাড়ির যাত্রীরা নেমে হাঁটাহাঁটি করে পুষ্টি বিবেচনায় বাড়ির সদস্যদের জন্য ফল-ফলাদি কেনে, কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়ি উপহারের জন্য কেনে। প্রতি রাতে এক-এক জন বিক্রেতা ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেন। যা থেকে একজন বিক্রেতা আশানুরুপ লাভবান হতে পারে।
ঘাট কতৃপক্ষ এবং আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর নির্দেশে সড়ানড়া করাতে হয় ফলের ভ্যান। যানবাহনের চাপ বাড়লে গাড়ির একাধিক সিরিয়াল করেন কতৃপক্ষ। তখন ভ্রাম্যমাণ ফল ব্যবসায়ীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইচ্ছেমতো জায়গায় দাঁড়িয়ে যান বিক্রেতারা।
টিটি/